ওবায়দুল কাদের আওয়ামী লীগের বিরল সৌভাগ্যবান নেতা। উপর্যুপরি তিন বার আওয়ামী লীগের মতো সংগঠনে সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন। একমাত্র জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছাড়া কারও এই কৃতিত্ব নেই। এরকম অসামান্য কৃতিত্ব নিয়েও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে মাঝে মাঝে তিনি অস্থিরতা প্রকাশ করেন।অতিকথনের দোষে দুষ্ট আওয়ামী লীগের এই সাধারণ সম্পাদক প্রায় প্রতিদিনই কথা বলেন।
তিনি একাধারে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবার সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।মন্ত্রণালয়ে তিনি কতটা সময় দেন না দেন সেটি মন্ত্রণালয় ভালো বলতে পারবে। কিন্তু প্রতিদিন গণমাধ্যমে উপস্থিত হয়ে বিএনপিকে গালমন্দ করা তার একটি রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। আর এই গালমন্দ করতে যেয়ে তিনি এমন সব কথা বলেন যা অনেকের জন্য বিব্রতকর।
গতকাল তিনি বলেছেন, জিয়াউর রহমানের আমলে নারীরা পতিতাবৃত্তি করছে। এই বক্তব্যটি নারীর প্রতি অসম্মান সূচক এবং অবমাননা সূচক বলেও অনেকে মনে করছেন। রুহুল কবির রিজভী বলেছিল যে, সারা ঢাকা শহর এখন ভিক্ষুকের শহরে পরিণত হয়েছে। তার জবাব দিতে গিয়েই এই বেসামাল মন্তব্যটি করেছেন ওবায়দুল কাদের। এই ধরনের বক্তব্য অপমানজনক এবং অসম্মানজনক শুধু নয়, একজন সাধারণ সম্পাদকের মুখ থেকে এ ধরনের বক্তব্য উচ্চারণ শালীনতা বিবর্জিতও বটে।
প্রশ্ন হচ্ছে যে, রিজভীর কথার জবাব দিতে হবে কেন ওবায়দুল কাদেরকে? রুহুল কবির রিজভী বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তাহলে তিনি রিজভীর বক্তব্যের জবাব দেন কেন?
আওয়ামী লীগে একাধিক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আছেন এবং তারা দক্ষ। এদের মধ্যে অনেকের বক্তব্য সাধারণ মানুষ পছন্দও করে। কিন্তু তাদের কাউকে বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ না দিয়ে ওবায়দুল কাদের নিজেই কেন সব বিষয়ে বক্তব্য রাখেন, এটি নিয়ে অনেকে বিস্মিত। আওয়ামী লীগের মতো একটি সংগঠনের সাধারণ সম্পাদকের সব বিষয়ে কথা বলা উচিত নয়।
এখন বিরোধী দলের কোন আন্দোলন নেই, কর্মসূচি নেই। রাজনীতি বলতে দেশের কিছু নেই। এ সময় প্রতিদিন ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য সাধারণ মানুষের মধ্যে এক ধরনের কৌতুক তৈরি করে। তিনি কি অস্থিরতায় ভোগেন? নিজের কাজ নিয়ে তিনি কি সন্দিহান? এ কারণেই কি তিনি প্রতিনিয়ত মিডিয়ার সামনে আসতে চান, কিছু একটা বলতে চান?
একজন সাধারণ সম্পাদক দলের মুখপাত্রও বটে। তিনি অবশ্যই কথা বলবেন, কিন্তু সেই কথা হতে হবে ব্যক্তিত্ব সম্পূর্ণ যুক্তিনির্ভর শালীনতার মধ্যে। একজন সাধারণ সম্পাদক যদিও অসংযত এবং অসংলগ্ন কথাবার্তা বলেন, তাহলে সেটির কারণে দলের ইমেজ ক্ষুন্ন হয়।
নির্বাচনের আগে যখন ওবায়দুল কাদের প্রতিনিয়ত কথা বলতেন, তখন সেটিকে সবাই একটি যুদ্ধের অংশ হিসেবে মনে করতেন। কারণ নির্বাচনের আগে এরকম একটি পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। কিন্তু এখন রাজনীতি নেই, আন্দোলন সংগ্রাম বলে কোন কিছু নেই। শুধু আছে তর্কযুদ্ধ। সেই তর্ক যুদ্ধে শুধু ওবায়দুল কাদেরকে লড়তে হবে কেন? বিএনপির সব নেতার বক্তব্যের জবাব ওবায়দুল কাদেরকেই দিতে হবে কেন?
আওয়ামী লীগের অনেক নেতা আছেন, অনেকে অনেক চমৎকার কথা বলেন। তাদেরকে সুযোগ না দিয়ে ওবায়দুল কাদের একা সব সময় যে কথা বলেন তা কি বস্তুনিষ্ঠ হয়, যুক্তিনিষ্ঠ হয়? প্রায় লাগামহীন কথা বলে তিনি নিজেই কি বিব্রত হন না? আওয়ামী লীগের মধ্যে এই কথাগুলো এসেছে।
অনেকেই মনে করেন যে, ওবায়দুল কাদেরের উচিত অতীতে সাধারণ সম্পাদকরা কীভাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন সেই বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করা। যেমন- প্রয়াত সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি কথা বলতেন কালেভদ্রে এবং যে কোন একটি প্রসঙ্গে তিনি যখন কথা বলতেন তখন তার একটা গুরুত্ব থাকত। আবার যখন গুরুত্বহীন ইস্যু থাকত তখন তিনি অন্য যুগ্ম সাধারণ সম্পাদককে কথা বলার সুযোগ দিতেন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের অনেক বড় মাপের নেতা। অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন। কিন্তু অতিকথনে নিজেকে তিনি গুরুত্বহীন করছেন কেন? এই ব্যাপারে তার বোধোদয় কি হবে কখনও?
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন