জোটবদ্ধ হয়েই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। তবে জোট শরিকদের আসন সমঝোতার জন্য অপেক্ষা করতে হবে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন পর্যন্ত। তফসিল অনুযায়ী তা ১৭ ডিসেম্বর। আগামী ৪ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শেষ হবে।
বিএনপির আপাত বর্জনের মধ্যেও এবারের সংসদ নির্বাচন বিতর্কমুক্ত ও অংশগ্রহণমূলক করতে নানা তৎপরতা চালাচ্ছে আওয়ামী লীগ। এর অংশ হিসেবে নৌকার মনোনয়নবঞ্চিতদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে বাধা দেওয়া হচ্ছে না। তেমনি জোট ভেঙে দিয়ে আওয়ামী লীগ শরিকদেরও ভোটের মাঠে উন্মুক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতার সুযোগ করে দেবে কি না তা-ও আলোচনায় ছিল। কিন্তু এখন জোটে ভোট করার পক্ষেই অবস্থান নিয়েছে আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ এক নেতা কালের কণ্ঠকে জানান, এই মুহূর্তে জোট ভাঙার কোনো পরিকল্পনা নেই। বরং জোটবদ্ধ হয়েই আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নেবে। সে ক্ষেত্রে শরিকদের সঙ্গে আসন বণ্টনের বিষয়টি ৪ ডিসেম্বরের পর আলোচনা হবে। নানাভাবে শরিকদের চাহিদা আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ে জানানো হচ্ছে।
তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
১৪ দলের সমন্বয়ক ও আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা জোটবদ্ধ নির্বাচন করব। ১৪ দল ১৪ দলই থাকছে। অতীতে যাঁরা আমাদের সঙ্গে জোটে ছিলেন তাঁদেরও বিবেচনায় রাখা হবে। যথাসময়ে সবাইকে আলোচনায় ডাকা হবে।
’
১৪ দলীয় শরিকদের সঙ্গে এখনো বসেননি আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এমনকি একাদশ সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সঙ্গেও আনুষ্ঠানিক আলোচনায় বসেনি আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের দলীয় সূত্র বলছে, শুধু শরিক বা জাতীয় পার্টি নয়, প্রয়োজনে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে এমন সব দলের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। শক্তিশালী স্বতন্ত্র প্রার্থী নিয়েও আলোচনায় বসার ভাবনা আছে আওয়ামী লীগের। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী, স্থানীয়ভাবে জনপ্রিয় স্বতন্ত্র এবং অন্য দল থেকে নির্বাচনে অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে যাঁদের জিতে আসার সক্ষমতা রয়েছে তাঁদের পুরোপুরি ছাড় দেওয়া হবে।
মনোনয়নপ্রাপ্ত ২৯৮ প্রার্থীকে দলীয় প্রার্থিতার চিঠি দিয়েছে আওয়ামী লীগ। আর জাতীয় পার্টি ২৮৭ আসনে প্রার্থী মনোনয়ন দিয়েছে। এর আগে সরকারের সঙ্গে থাকা ১৪ দলের শরিক জাসদ (ইনু) ১৮১ আসনে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে। গতকাল ১২৩ আসনে প্রার্থীর নাম প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশন। নতুন নিবন্ধন পাওয়া তৃণমূল বিএনপি, বিএনএমসহ আরো কয়েকটি দলও মনোনয়ন দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রয়াত এইচ এম এরশাদের জাতীয় পার্টি (জাপা), রাশেদ খান মেননের বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, হাসানুল হক ইনুর বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ), বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বিকল্পধারা, সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারীর তরীকত ফেডারেশন এবং আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (জেপি) ৩৩টি আসনে জিতেছিল।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের জাতীয় নির্বাচন পরিচালনাসংক্রান্ত কমিটির কো-চেয়ারম্যান ও দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সব হিসাব মেলাতে এখনো সময় লাগবে। সময়মতো আমরা সবার সঙ্গে বসব। কথা বলব। শরিকসহ বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নেতাদের সঙ্গেও আলোচনা করব।’
গতকাল সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘আমরা দেখছি কারা কারা (নির্বাচনে অংশ নিতে) চাইছে। আমাদের কৌশলগত সিদ্ধান্ত আছে, ১৭ তারিখ (ডিসেম্বর) পর্যন্ত সময় আছে। এর ভেতরে আমরা পরিবর্তন, সংশোধন করতে পারব।’
ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের ওবায়দুল কাদের আরো বলেন, ‘৩০০ আসনেই আওয়ামী লীগের প্রার্থী থাকবে। তবে সমঝোতা হলে জোটের শরিকদের কিছু আসন ছেড়ে দেওয়া হবে। মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন পর্যন্ত আমরা পর্যবেক্ষণ করব, সমন্বয় করব। যেখানে যা প্রয়োজন তা করব।’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন