আলী রেজার কাছে অভাবনীয় ব্যাপার! অন্যদিনের তুলনায় তিনি অফিসে পৌঁছেছেন বেশ আগেই। যানজটের নগরী বলে পরিচিত ঢাকায় এটিই তার কাছে অবিশ্বাস্য ঠেকছে!
স্বাভাবিক সময়ে সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববারে উত্তরা থেকে মোহাম্মদপুর পৌঁছাতে তার লেগে যায় দুই ঘণ্টার মতো সময়। সেখানে আজকে প্রায় ২০ কিলোমিটারের পথ পাড়ি দিয়েছেন মাত্র ২৫ মিনিটে।
একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আলী রেজা ব্যাপারটি বেশ উপভোগ করেছেন। ঢাকা টাইমসের সঙ্গে আলাপকালে তুলে ধরেন একই পথে যাতায়াতে তার প্রতিদিনের বিড়ম্বনার কথা।
বলেন, ‘সকাল ৭টায় উত্তরার বাসা থেকে বেরিয়ে রাজলক্ষ্মীর সামনে আধা ঘণ্টা অপেক্ষা করেও কোনো বাস পাইনি। উপয়ান্তর না পেয়ে ভাড়ার মোটরসাইকেলে চড়ে বসি। মাত্র ২৫ মিনিটে পৌঁছে যাই মোহাম্মদপুরের টাউন হল এলাকায় আমার গন্তব্যে।’
নয়া পল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশ পুলিশি হামলায় পণ্ড করে দেওয়ার প্রতিবাদে রোববার সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালন করে বিএনপি। আগের দিন পণ্ড হওয়া সমাবেশ থেকেই হরতালের আহ্বান করেছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শনিবার দুপুরে শুরু হওয়া সংঘাতের পর থেকেই রাজধানী ছিল আতঙ্কের, উদ্বেগের। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মানুষ তেমন একটা ঘর থেকে বের হয়নি বললেই চলে। তার মধ্যে সড়কে ব্যক্তিগত বাহন আর গণপরিবহনের উপস্থিতিও তেমন একটা ছিল না।
ফলে যাতায়াতে গণপরিবহন পেতে বিড়ম্বনা ছিল। অনেকেই বাড়তি টাকায় ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেলে গেছেন গন্তব্যে। বিশেষ করে অফিসগামী ও বাড়িফেরত লোক, যাদের দ্রুত যাওয়ার তাড়া ছিল, তারাই বেশি চেপেছেন এই দুই চাকার বাহনে।
এদিকে হরতালের পর তিন দিনের লাগাতার অবরোধ ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। সোমবার কোনো কর্মসূচি রাখেনি দলটি। আগামী মঙ্গল থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দেশজুড়ে ‘সর্বাত্মক অবরোধ’ পালন করবে সরকার হটানোর এক দফা আন্দোলনে থাকা বিএনপি।
এরইমধ্যে শনিবার পুলিশের সঙ্গে বিএনপির সংঘর্ষ চলাকালে সংঘাতে প্রাণ গেছে এক পুলিশ সদস্যের। পুলিশের কাঁদানে গ্যাসে আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক রফিক ভূইয়া মারা গেছেন। রাজধানীর মুগদা এলাকার এক যুবদল নেতারও মৃত্যু হয়েছে। আর রবিবার সকালে হরতাল চলাকালে বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের সংঘর্ষে জাহাঙ্গীর আলম (৪৮) নামের শ্রমিক ইউনিয়নের এক নেতা মারা যান।
সন্ধ্যায় ফায়ার সার্ভিস জানাল, শনি-রবিবার দুদিনে সারাদেশে ৪৫টি অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে, যার মধ্যে ২৭টি হয়েছে রাজধানী ঢাকায়। এসব ঘটনায় ৩৭টি গাড়ি পুড়েছে। এর মধ্যে ১৯টি বাস, তিনটি মাইক্রোবাস, তিনটি অ্যাম্বুলেন্স, একটি ট্রাক, সাতটি মোটরসাইকেল, তিনটি পিকআপ, একটি সিএনজি পুড়ে যায়। এছাড়া পুলিশ বক্স, বিদ্যুৎ অফিস, বাস কাউন্টার, রাজনৈতিক দলের কার্যালয়ে আগুনের ঘটনাও ছিল।
আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে সৃষ্ট রাজনৈতিক নানা ঘটনাপ্রবাহে জনমনে উদ্বেগ বেড়েই চলেছে। ক্ষমতাসীন দল ও রাজপথের বিরোধী দল উভয়ই যার যার দাবিতে অনড়। আলোচনা করে সৃষ্ট সংকট নিরসনের তাগিদ এলেও তেমন কোনো উদ্যোগও নেই। ফলে পরিস্থিতির কী হতে যাচ্ছে তা নিয়ে শঙ্কাও বাড়ছে জনমনে। এমন প্রেক্ষাপটে দেশি-বিদেশি পর্যায় থেকে রাজনৈতিক সংলাপের তাগিদও এসেছে।
ঢাকাটাইমস
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন