ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম তার এলাকায় গাছ কাটলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিলেও ডিএনসিসির একটি সড়কেই গত দুই মাসে উন্নয়নের নামে কাটা হয়েছে শতাধিক গাছ। কাটার অপেক্ষায় আছে আরও বেশ কিছু। এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দা ও পরিবেশবাদীরা। রাজধানীর সাতমসজিদ রোডে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) গাছ কাটা নিয়ে সমালোচনা না থামতেই এবার একই বিতর্কে জড়িয়েছে উত্তর সিটি।
অথচ সম্প্রতি ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম পরিবেশ রক্ষায় নিজের অবস্থান জানিয়ে বলেন, ‘আমরা বুঝতে পারছি যে কী হিটের (গরম) মধ্যে আছি। গাছ ও পানির প্রবাহ নিশ্চিত করতে পারলেই ন্যাচার বেজ সলিউশনে আমরা নগরকে ঠান্ডা রাখতে পারব। তাই পরিবেশ-পরিস্থিতি অনুকূলে আনতে পাড়ায় পাড়ায়, মহল্লায় মহল্লায় ২ লাখ গাছ লাগাব। নগরের যে খালগুলো দখল হয়ে গেছে সেগুলো উদ্ধার করে পানির প্রবাহ আনার চেষ্টা করছি।’ গত ২ জুন ‘লেটস সেভ দ্য প্লানেট’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে তিনি সবার প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, গাছ কেটে কোনো উন্নয়ন নয়। ডিএনসিসি এলাকায় বিনা অনুমতিতে গাছ কাটলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, গাছ কাটলে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। সড়কের বিদ্যমান গাছগুলো না কেটেই উন্নয়ন কাজ করার নির্দেশ দিয়েছি। মিরপুরের টেকনিক্যাল ক্রসিংয়ে সড়ক বিভাজক নির্মাণকালে ঠিকাদার কয়েকটি গাছ কেটে ফেলায় তাকে ডিএনসিসিতে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া দুজন প্রকৌশলীকেও বরখাস্ত করা হয়েছে। এদিকে গতকাল সরেজমিন দেখা গেছে, সড়ক বিভাজক উন্নয়নের নামে ডিএনসিসি এলাকার মহাখালীর আমতলী থেকে গুলশান-১ পর্যন্ত (বীর উত্তম এ কে খন্দকার সড়ক) সড়ক বিভাজকে থাকা কৃষ্ণচূড়া, বটসহ শতাধিক পুরনো গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। বিভাজকের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে আছে ৩০-৩৫টি গাছের গুঁড়ি। শুকিয়ে গেছে মোটা শিকড়গুলো। কিছু গাছ এখনো দাঁড়িয়ে থাকলেও শিকড় কাটা পড়ায় শুকিয়ে গেছে পাতা। কোথাও গাছ রেখেই কাজ চলছে। কাটা পড়া কয়েকটি গাছের গোড়া থেকে বের হয়েছে সবুজ শাখা-প্রশাখা। গাছ কাটায় ছায়া-সুশীতল সড়কটি এখন দিনভর তপ্ত হয়ে থাকে গনগনে সূর্যের তাপে। স্থানীয়রা বলছেন, একদিকে মেয়র গাছ লাগানোর প্রকল্প নিচ্ছেন, অন্যদিকে বড় বড় গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে। এগুলো অর্থের অপচয় ছাড়া কিছুই নয়। যে গাছগুলো কাটা হয়েছে, সেগুলোর বয়স ১৫-২০ বছর। ওই এলাকার দোকানদাররা জানান, দুই মাস ধরে রাতের আঁধাওে দৈনিক একটি-দুটি করে গাছ কাটা হয়েছে। এরই মধ্যে ১০০টির বেশি গাছ কাটা হয়েছে। আরও কিছু গাছ কাটা পড়তে পারে। এদিকে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) এক গবেষণায় দেখা গেছে, ১৯৯৫ সালে ঢাকায় সবুজ ও ফাঁকা জায়গা ছিল ৩৫.৭১ শতাংশ। ২০২৩ সালে সেটা কমে দাঁড়িয়েছে ২০.৩১ শতাংশে। উন্নয়নের নামে গাছ কাটার প্রতিবাদ জানিয়ে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা)-এর চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, গাছ ও জলাশয় কমে যাওয়ার পরিবেশগত প্রভাব আমরা এরই মধ্যে টের পাচ্ছি। প্রচ- দাবদাহে ত্রাহি অবস্থা। রাজশাহী সিটিতে গাছ বাঁচিয়ে সড়কের কাজ হচ্ছে। ইচ্ছা থাকলেই এটা করা যায়। এ জন্য প্রকল্প তৈরির আগে সরেজমিন ঘটনাস্থলে যেতে হবে। ঘরে বসে প্রকল্প বানালে পরিবেশের ক্ষতি হবেই। বলা হচ্ছে, একটি গাছ কাটলে তিনটি লাগানো হবে। তিনটি গাছ লাগানোর জায়গা কোথায়? এ ছাড়া এই গাছ কত দিনে বড় হবে? যে গাছগুলো কাটা হলো, সেগুলোতে অনেক পশু-পাখি থাকত। সেগুলোর আশ্রয় হবে কোথায়? আমার জানামতে উত্তরের মেয়র তুলনামূলক গাছের প্রতি দরদি। প্রকল্প গ্রহণে প্রকৃতি রক্ষার বিষয়টা গুরুত্ব দেওয়া উচিত সবার। অন্যথায়, আমাদের টিকে থাকা কঠিন হয়ে যাবে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন