করোনাভাইরাসের কারণে চলমান সাধারণ ছুটিতে কর্মহীন হয়ে পড়াদের মধ্যে কেবল স্থানীয় ভোটাররা পাচ্ছেন ত্রাণ। যাদের ভোট বাইরে তারা ঢাকায় অবস্থান করেও ত্রাণ পাচ্ছেন না। এটাই সিটি করপোরেশনের নিয়ম বলে জানাচ্ছেন স্থানীয় কাউন্সিলর। যদিও সিটি করপোরেশন বলছে, এমন কোনো নির্দেশনা তাদের পক্ষ থেকে দেয়া হয়নি।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ৩০ নম্বর ওয়ার্ডে ঘটছে এমন ঘটনা।
আদাবর, শেখেরটেক এলাকা মিলিয়ে উত্তর সিটির ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড। ওয়ার্ডটিতে তুলনামূলক বেশি দিনমজুর ও খেটে খাওয়া মানুষের বাস। স্থানীয় কাউন্সিলরের মতে, এই সংখ্যা ৬০ হাজারের কাছাকাছি।
মঙ্গল ও বুধবার ওয়ার্ডের বিভিন্ন স্থানে ফটোকপির দোকানে স্থানীয় দরিদ্র মানুষের উপচেপড়া ভিড় দেখা যায়। কারণ জানতে চাইলে সেখানে আসা লোকজন জানান, কাউন্সিলর খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করবেন। আর তা পেতে স্থানীয় ভোটার হওয়া বাধ্যতামূলক। প্রমাণ হিসেবে জাতীয় পরিচয়পত্রে ফটোকপি জমা দিয়ে হবে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে প্রতি ওয়ার্ড কাউন্সিলরের মাধ্যমে পাঁচশ পরিবারকে খাদ্যসামগ্রী দেয়া হচ্ছে। যা ওয়ার্ডের কর্মহীন হয়ে পড়া বাসিন্দার তুলনায় অতি সামান্য। ফলে কর্মহীন হয়ে পড়াদের তালিকা চেয়েছে সিটি করপোরেশন। সে অনুযায়ী তালিকা তৈরি করছেন স্থানীয় কাউন্সিলর আবুল হাসেম। ঢাকা টাইমসকে তিনি জানান, তার ওয়ার্ডে দিনমজুর শ্রেণির লোক বেশি। যে সংখ্যা প্রায় ৬০ হাজার। আর সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে দেয়া ত্রাণের পরিমাণ খুবই কম। স্থানীয় ভবন মালিকদের অনেকে এবং তিনি ব্যক্তিগতভাবে বেশ কিছু মানুষের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেছেন।
এদিকে ওয়ার্ড দিতে কর্মহীন হয়ে পড়া মানুষের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করতে দেখা গেছে স্থানীয় ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও মৎসজীবী লীগের নেতাকর্মীদের। বিপুল পরিমাণ ত্রাণ সামগ্রী বিতরণের পরেও জনবহুল ওয়ার্ডের অনেক বাসিন্দাই এখনো ত্রাণের জন্য হাহাকার করছেন।
কাউন্সিলরের পক্ষ থেকে খাদ্যসামগ্রী প্রয়োজন এমন বাসিন্দাদের তালিকা করা হচ্ছে। তবে এক্ষেত্রে কেবল স্থানীয় ভোটাররাই তালিকায় ঠাঁই পাচ্ছেন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, ওয়ার্ডের আদাবর, শেখেরটেক, সুনিবিড় হাউজিং এলাকায় এমন অনেক দিনমজুর ও দরিদ্র মানুষ রয়েছেন যারা ঢাকার ভোটার না। ফলে তারা এই ত্রাণ সুবিধা পাচ্ছেন না।
কাউন্সিলর আবুল হাসেম দাবি করেন, তার এলাকার মোট বাসিন্দাদের ৯০ শতাংশই তার ওয়ার্ডের ভোটার। যদিও স্থানীয় সূত্র বলছে, ওয়ার্ডের বেড়িবাঁধ সংলগ্ন এলাকা ও বস্তির বিপুল পরিমাণ বাসিন্দা ঢাকার বাইরে থেকে আসা এবং তারা ঢাকার ভোটার না।
এবিষয়ে কাউন্সিলর ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমাদের ৩০ নম্বর ওয়ার্ড ছাড়া আমরা বাইরের কাউকে নিচ্ছি না। আমি ঢাকার বাইরের কাউকে দিচ্ছি না। আমাদেরকে সিটি করপোরেশন থেকে জানাইছে, ওই এলাকার বাসিন্দা যারা তাদেরকে দেয়ার জন্য।’
তবে সিটি করপোরেশনের এমন কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি বলে স্পষ্ট জানিয়েছেন উত্তর সিটির ভারপ্রাপ্ত মেয়র জামাল মোস্তফা। ঢাকা টাইমসকে তিনি বলেন, ‘যে ভোটার কেবল সেই খাবার পাবে, সিটি করপোরেশন থেকে এমন কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়নি।’
এবিষয়ে কাউন্সিলর আবুল হাসেমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে জানিয়ে উত্তর সিটির ভারপ্রাপ্ত মেয়র বলেন, ‘ঢাকা একটা মানুষ আসছে, গ্রাম থেকে আসছে, সে কি এখন না খেয়ে মারা যাবে! কাউন্সিলর ভুল বুঝেছে। ঢাকায় যে ক্ষুধার্ত লোক, এখন আর আয়-ইনকাম নাই, তার বাড়ি হয়ত বরিশাল, এখন কি সে না খেয়ে থাকবে নাকি!’
(ঢাকাটাইমস
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন