আয়ারল্যান্ড অধিনায়ক পল স্টার্লিংয়ের আন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টি ক্যারিয়ার ১৫ বছরের। এত দিনে ১৪৪টি টি–টোয়েন্টি খেলে মাত্র ১৩ বার ০ রানে আউট হয়েছেন স্টার্লিং। আন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টিতে এত দিন সর্বোচ্চসংখ্যকবার ০ রানে আউট হওয়ার বিব্রতকর বিশ্ব রেকর্ডটি তাঁর একার দখলে থাকলেও স্টার্লিং অনুযোগ করে বলতেই পারেন, এত বছর ধরে এতগুলো ম্যাচ খেললে অমন একটু–আধটু হতেই পারে!
কিন্তু সৌম্য সরকার ঠিক কী দিয়ে নিজেকে প্রবোধ দেবেন? বাংলাদেশি ওপেনারের আন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের বয়স স্টার্লিংয়ের প্রায় অর্ধেক। ম্যাচ এবং ইনিংসের সংখ্যায়ও প্রায় অর্ধেক। কিন্তু ০ রানে আউট হওয়ায় সৌম্য ও স্টার্লিং এখন সমানে সমান। অর্থাৎ আন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চসংখ্যকবার ০ রানে আউট হওয়ার বিশ্ব রেকর্ড এখন সৌম্যরও। স্টার্লিং হাঁপ ছেড়ে বাঁচতে পারেন এই ভেবে, যাকগে অন্তত একজন সঙ্গী তো মিলল! একা একা কত দিন আর শূন্যের কণ্টকাকীর্ণ মুকুট পরে থাকা সম্ভব! স্টার্লিং তাই সৌম্যকে একটা ধন্যবাদ জানাতেই পারেন।
সেটি অবশ্যই ডালাসে আজ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচে সৌম্য আউট হওয়ার পর। ধনাঞ্জয়া ডি সিলভার বলে ইনিংসের মাত্র তৃতীয় বলেই মিড অনে ক্যাচ শিখিয়ে আউট হন সৌম্য। তখন তাঁর মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছিল না। যেন রাজ্যের আঁধার ভর করেছে। বোঝাই যাচ্ছিল, শটটি অনিয়ন্ত্রিত ছিল এবং ভুল করে সেটাই খেলে ফেলায় সৌম্য সম্ভবত নিজেকেই শাপশাপান্ত করছিলেন। কিন্তু কথায় আছে, কারও পৌষ মাস কারও সর্বনাশ! সৌম্যর ওই আউটের পরই স্টার্লিংয়ের মুখের হাসি সম্ভবত চওড়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টিতে এটা যে সৌম্যর ১৩তম ‘ডাক’। অর্থাৎ সর্বোচ্চসংখ্যকবার ০ রানে আউট হওয়ার বিশ্ব রেকর্ডের জন্য এখন শুধু একাই স্টার্লিংকে রঙ্গরসিকতার শিকার হতে হবে না। ভাগটা নিতে হবে সৌম্যকেও।
আন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টিতে ৮৪ ম্যাচে ৮৩ ইনিংসে ১৭.৬৯ গড়ে ১৩৯৮ রান করার পথে ১৩ বার ০ রানে আউট হয়েছেন সৌম্য। স্টার্লিং ১৪৪ ম্যাচে ১৪৩ ইনিংসে ২৭.২৭ গড়ে ৩৬০০ রান করার পথে ০ রানে আউট হয়েছেন ১৩ বার। ‘আনলাকি থার্টিন’–এর এই ক্লাবে সদস্য শুধু তাঁরা দুজনেই। ‘আনলাকি টুয়েলভ’, অর্থাৎ ১২ বার ০ রানে আউট হয়েছেন চারজন। এর মধ্যে দুজন প্রায় অচেনা, একজন বেশ পরিচিত এবং অন্যজন বলতে গেলে কিংবদন্তি!
রুয়ান্ডার ২৪ বছর বয়সী স্পিনার কেভিন ইরাকোজের নাম আপনি না–ও শুনতে পারেন। তবে ২০২১ থেকে ২০২৩—এই অল্প সময়ের মধ্যে ৭২ ম্যাচে ৫৫ ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নেমে ১২ বার ০ রানে আউট হয়ে কারও কারও চোখে বিস্ময়ের জন্ম দিতে পারেন ইরাকোজে। আয়ারল্যান্ডের সাবেক ব্যাটসম্যান কেভিন ও’ব্রায়েন ১১০ ম্যাচে ১০৩ ইনিংসে ১২ বার ০ রানে আউট হয়েছেন। ঘানার ড্যানিয়েল অ্যানেফি এই ‘আনলাকি টুয়েলভ’ ক্লাবের মধ্যে দ্রুততম। ২০১৯ থেকে ২০২৩ এর মধ্যে মাত্র ৩৬ ম্যাচে ২৮ ইনিংসে ১২ বার ০ রানে আউট হয়েছেন এই অলরাউন্ডার। শেষের জনের নাম রোহিত শর্মা। ১৫২ ম্যাচে ১৪৪ ইনিংসে ১২ বার ০ রানে আউট হয়েছেন ভারতের অধিনায়ক।
ইনফোগ্রাফিক্স: প্রথম আলো
বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে শুধু সৌম্যই ০ রানে আউট হওয়ার সংখ্যাটা দুই অঙ্কে নিয়ে গেছেন। দ্বিতীয় মুশফিকুর রহিম ৯৩ ইনিংসে ৮ বার ০ রানে আউট হয়েছেন। ১২১ ইনিংসে সাকিবও ‘ডাক মেরেছেন’ ৮ বার।
১ জুন ভারতের বিপক্ষে টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রস্তুতি ম্যাচেও ০ রানে আউট হয়েছিলেন সৌম্য। তবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সর্বশেষ তিন ইনিংস মিলিয়ে তাঁর এটি দ্বিতীয় দফা ০ রানে আউট হওয়ার নজির। টি–টোয়েন্টিতে আরেকটি অনাকাঙ্ক্ষিত রেকর্ডও চোখ রাঙাচ্ছে সৌম্যকে। এই টুর্নামেন্টে আর একবার ০ রানে আউট হলে তিনি বসবেন তিলকারত্নে দিলশান ও শহীদ আফ্রিদির পাশে। টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ৫বার ০ রানে আউট হওয়ার রেকর্ড দুই কিংবদন্তির। সৌম্য ৪ বার আউট হয়েছেন ০ রানে, অর্থাৎ আর দুবার এভাবে আউট হলেই রেকর্ডটি এককভাবে তাঁর হবে।
টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আর একবার ০ রানে আউট হলে আরেকটি রেকর্ডে ভাগ বসাবেন সৌম্যপ্রথম আলো
টি–টোয়েন্টিতে সৌম্যর সর্বশেষ ফিফটি ২৭ ইনিংস আগে, ২০২১ সালের ২৫ জুলাই হারারেতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। সৌম্য এ সংস্করণে সেভাবে কখনো ধারাবাহিক ছিলেন না। ২০১৫ সালে অভিষেকের ২৬ ইনিংস পর ২০১৮ সালে এই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেই পেয়েছিলেন প্রথম ফিফটি। তখন স্ট্রাইক রেট অবশ্য বেশ ভালো ছিল। সব মিলিয়ে ৮৩ ইনিংসে ৫ ফিফটিতে আন্তর্জাতিক টি–টোয়েন্টিতে ১৩৯৮ রান করেছেন সৌম্য; স্ট্রাইক রেট ১২২.৯৫।
টি–টোয়েন্টিতে অন্তত ৮০ ইনিংস ব্যাট করেছেন—এমন ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সৌম্যর রানসংখ্যা পেছন থেকে দ্বিতীয়। অর্থাৎ সৌম্যর পর সর্বনিম্ন রান শুধু আয়ারল্যান্ডের জর্জ ডকরেলের। ১৩৮ ম্যাচে ৯০ ইনিংসে ১৩০.৩০ স্ট্রাইক রেটে ১১১৮ রান করেছেন ডকরেল। তবে স্পিন অলরাউন্ডার ডকরেল সৌম্যর মতো টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান নন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন