দেশের তরুণদের মানসিক অসুস্থতার পেছনে ফেসবুক, গুগল, ইউটিউব, টিকটকের মতো সোশ্যাল মিডিয়া (সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম) দায়ী। এগুলোর আসক্তি কমাতে অর্থসহায়তার নামে লোকদেখানো কার্যক্রম নয়, আসক্তিমুক্তির ক্ষেত্রে তাঁদের জবাবদিহির আওতায় আনা দরকার।’ আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের আইসিটি টাওয়ারে অনুষ্ঠিত ‘মানসিক স্বাস্থ্য পরিষেবার অগ্রগতিতে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার’ শীর্ষক একটি গোলটেবিল বৈঠকে এমন মন্তব্য করেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘দেশে এখন সাড়ে ৫ কোটি থেকে ৬ কোটি ফেসবুক ব্যবহারকারী। ফেসবুকের অ্যালগরিদম এমনভাবে তৈরি করা, যাতে আমাদের তরুণ-তরুণী, কিশোর-কিশোরীরা প্রভাবিত হয়। ব্যবহারকারীরা মনের অজান্তেই বিভিন্নভাবে নেতিবাচক (নেগেটিভ) কনটেন্টে আসক্ত হচ্ছে।’ সারা দেশে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম আরও জোরদার করার উদ্দেশ্যে ইউএনডিপি বাংলাদেশ, বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল (বিসিসি) ও মানসিক স্বাস্থ্যসেবা উদ্যোগ (স্টার্টআপ) মনের বন্ধু এই বৈঠকের আয়োজন করে। মনের বন্ধুর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
ডেটাবিজ্ঞানী ও মনোবিজ্ঞানীদের সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান জুনাইদ আহ্মেদ। তিনি বলেন, ‘এ সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য উচ্চপ্রযুক্তির মেন্টাল হেলথ জিপিটি (জেনারেটিভ প্রিট্রেইনড টান্সফরমারস) তৈরি এবং এর মাধ্যমে দেশের ১৪ হাজার কমিউনিটি স্বাস্থ্য ক্লিনিক ব্যবহার ও ৩৫০ সংসদ সদস্যকে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। আমরা ইচ্ছা করলেই পুরো পৃথিবীর সব নেগেটিভ কনটেন্ট (আধেয়) একসঙ্গে মুছে ফেলতে পারব না। সাইবার বুলিং নিশ্চিহ্ন করতে পারব না। কিন্তু সবাইকে মানসিক স্বাস্থ্য, ডিজিটাল ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা স্বাক্ষরতা (এআই লিটারেসি) নিয়ে সচেতন করতে পারব। এ জন্য সরকার-বেসরকারি খাত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও গণমাধ্যমকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।’
বিসিসির নির্বাহী পরিচালক রণজিৎ কুমার এ বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। বৈঠকের সঞ্চালক এবং মনের বন্ধুর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) তৌহিদা শিরোপা বলেন, ‘প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই আমরা তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগ এবং স্টার্টআপ বাংলাদেশের তত্ত্বাবধানে উচ্চতর প্রযুক্তি ও এআইয়ের সহায়তায় সর্বস্তরের মানুষের কাছে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে কাজ করে যাচ্ছি। আমরা চাই, সবার সহযোগিতায় বাংলাদেশ সরকারের “জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য বাস্তবায়ন পরিকল্পনা (২০২৪-২০২৯)”-এর আলোকে স্মার্ট বাংলাদেশ তৈরি করতে।’
ইউএনডিপির গবেষণা বিশ্লেষক ফয়সাল বিন মজিদ পুরো প্রকল্পটি উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, বিসিসি ও ইউএনডিপি বাংলাদেশের সহযোগিতায় মনের বন্ধু বাংলাদেশের দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ে মানসিক স্বাস্থ্য ও সাইকোসোশ্যাল সাপোর্ট–সংক্রান্ত একটি পাইলট প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। এই প্রকল্পের আওতায় ১২০ শিক্ষার্থীকে ‘আমিই মনের বন্ধু’ মানসিক স্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে।
বৈঠকে আইসিটি সচিব মো. সামসুল আরেফিন বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে মানসিক স্বাস্থ্যসেবার এ উদ্যোগ দেশব্যাপী সম্প্রসারণের এখনই উপযুক্ত সময়। বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র হেলথ স্পেশালিস্ট বুশরা বিনতে আলম বলেন, ‘শহরের পাশাপাশি আমাদের গ্রামাঞ্চলেও মানসিক স্বাস্থ্যসেবার সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।’ বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন বিসিসির পিটিআইবি প্রকল্প পরিচালক মো. আবু সাঈদ, ইউএনডিপি বাংলাদেশের সিনিয়র গভর্ন্যান্স স্পেশালিস্ট শীলা তাসনিম হক, পিটিআইবির প্রকল্প ব্যবস্থাপক রবার্ট স্টোলম্যান, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজির অধ্যাপক কামাল উদ্দিন আহমেদ চৌধুরীসহ অনেকে।
বৈঠকে সাইবার বুলিং ও অনলাইন ক্ষতি মোকাবিলায় মানসিক স্বাস্থ্য ও মনোসামাজিক পরিষেবা (এমএইচপিএসএস) চালু করার বিষয়ে আইসিটি বিভাগ এবং ইউএনডিপির যৌথ উদ্যোগ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়। এ ছাড়া বক্তারা ‘ন্যাশনাল মেন্টাল হেলথ স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যান ২০২০-২০৩০’-এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বাংলাদেশে মানসিক স্বাস্থ্য পরিষেবার অগ্রগতির জন্য তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার ও সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন