কেন্দ্র, খাইবারপাখতুনখোয়া ও পাঞ্জাবে সরকার গঠনের নির্দেশ দিয়েছেন পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) নেতা ইমরান খান। সরকার গঠন নিয়ে পিটিআই পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজ (পিএমএল-এন) ও পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) সঙ্গে আলোচনা করবে না বলে জানিয়েছেন দলের চেয়ারম্যান গহর আলী খান। তিনি বলেন, ‘আমরা তাদের সঙ্গে আলোচনায় স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি না। তাদের সঙ্গে সরকার গঠনের আলাপ হবে না।
দলের ম্যান্ডেট গ্রহণ না করলে বিরোধী দল গঠন করবে পিটিআই।’
অন্যদিকে জাতীয় নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর গতকাল রবিবার বৈঠক করেছেন পিএমএল-এন ও পিপিপি নেতারা। ওই বৈঠকে পাকিস্তানকে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা থেকে রক্ষায় তাঁরা একমত হয়েছেন বলে পিএমএল-এনের বিবৃতিতে জানানো হয়েছে।
পিএমএল-এন প্রেসিডেন্ট শাহবাজ শরিফ দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের একটি প্রতিনিধিদল নিয়ে গতকাল লাহোরে পিপিপি চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির বাসভবনে যান।
সেখানে দুই পক্ষ দেশের চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করে। সেই বৈঠকের ধারাবাহিকতায় আগামী দিনে দুই দলের আরো বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।
এদিকে পাকিস্তানের জাতীয় নির্বাচনে ভোটগ্রহণের দুই দিনের বেশি সময় পর গতকাল চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন। ২৬৪ আসনে ঘোষিত ফলাফলে ইমরান খানের দল পিটিআই সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ৯৩টি আসনে জয় পেয়েছেন।
অন্যদিকে নওয়াজ শরিফের দল পিএমএল-এন ৭৪টি এবং বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির পিপিপি ৫৪টি আসনে জয় পেয়েছে। কিন্তু নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণায় দেরি হওয়ায় দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ করেছে পিটিআই। বিক্ষোভ দমনে টিয়ার গ্যাস ছোড়ার পাশাপাশি লাঠিপেটা করেছে পুলিশ। এ ছাড়া পিটিআইয়ের বেশ কিছু সমর্থককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদিকে বিক্ষোভে চলা গুলিতে ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক মুভমেন্টের (এনডিএম) দুই কর্মী নিহত হয়েছেন।
দলটির প্রধানসহ আহত হয়েছে ১৫ জন।
নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণায় দেরির কারণে আগেই বিক্ষোভের ডাক দিয়েছিল পিটিআই। গতকাল দেশের বিভিন্ন শহরে জড়ো হতে থাকে দলটির সমর্থকরা। দলটির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার গহর আলী খান সমর্থকদের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানান।
এক এক্স (সাবেক টুইটার) বার্তায় পিটিআই চেয়ারম্যান বলেন, ‘দাসত্ব মানব না’—ইমরান খানের এই বার্তায় আস্থা রেখে গত ৮ ফেব্রুয়ারি ভোট দিয়েছে জনগণ। কিন্তু জনগণের সিদ্ধান্ত না মেনে জনগণের রায় চুরি করতে চাইছে তারা। ভোটের ফলাফল ঘোষণা দেরির কারণে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের আহ্বান জানিয়েছেন ইমরান খান।
এদিকে বিক্ষোভ দমনের ঘোষণা দিয়ে ইসলামাবাদ পুলিশ বলেছে, বেআইনি সমাবেশের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এটা মনে রাখতে হবে, সমাবেশের আহ্বান জানানোও একটি অপরাধ। একই ধরনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে পাশের রাওয়ালপিন্ডি শহরে। এরই মধ্যে শহর দুটিতে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।
এ ছাড়া দাঙ্গা দমনের সামগ্রী নিয়ে লাহোরের লিবার্টি মার্কেটের সামনে জড়ো হতে দেখা গেছে বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে।
তা সত্ত্বেও দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ করেছে পিটিআই সমর্থকরা। রাওয়ালপিন্ডির সাদিকাবাদে নির্বাচন কমিশনের কার্যালয়ের বাইরে বিক্ষোভ করে পিটিআই সমর্থকরা। এ সময় বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ার গ্যাস ছোড়ে ও লাঠিপেটা করে পুলিশ।
সিন্ধু প্রদেশে একটি প্রেস ক্লাবের সামনে পিটিআই সমর্থিত স্বতন্ত্র দুই প্রার্থীর নেতৃত্বে বিক্ষোভ করে সমর্থকরা। এ ছাড়া নির্বাচন কমিশনের সিন্ধু কার্যালয়ের বাইরেও বিক্ষোভ করেন দলটির নেতাকর্মীরা।
পাঞ্জাবের লাহোরে পুলিশের উপস্থিতিতে পণ্ড হয়ে যায় পিটিআইয়ের পূর্বনির্ধারিত বিক্ষোভের পরিকল্পনা। তবে পিটিআই বলেছে, বিক্ষোভকারীদের উসকে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল পুলিশের, যাতে সহিংসতা হয় এবং ইমরান খানের ওপর দায় চাপানো যায়।
এদিকে খাইবারপাখতুনখোয়া প্রদেশের উত্তর ওয়াজিরিস্তানে মমিরামশাহ ক্যান্টনমেন্টে বিক্ষোভে পুলিশ গুলি ছুড়েছে বলে অভিযোগ করেছে এনডিএম। এতে দলটির দুই কর্মী নিহত হয়েছেন। দলের প্রধান মহসিন দাওয়ারসহ ১৫ জন আহত হয়েছে।
তবে পুলিশের দাবি, দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের ওপর গুলি চালিয়েছে এনডিএম সমর্থকরা। পরে পুলিশ গুলি ছোড়ে।
ইমরান খানের দল পিটিআই সমর্থিত এক বিজয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থী নওয়াজ শরিফের দলে যোগ দিয়েছেন। তাঁর নাম ওয়াসিম কাদির। তিনি লাহোর জাতীয় পরিষদের একটি আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছেন। এ বিষয়ে পিটিআইয়ের বক্তব্য জানা যায়নি।
সূত্র : জিও নিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন