বারে মদ পানের পর টাকা না দিয়ে উল্টো ভাঙচুর করে কয়েক লাখ টাকা ও ১২০ বোতল মদ লুট করার অভিযোগ উঠেছে রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজ শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে।
গত শনিবার (২৩ সেপ্টেম্বর) রাতে মহাখালীর জাকারিয়া বারে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় বনানী থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, ঘটনার দিন রাত ১১টার দিকে সরকারি তিতুমীর কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি রিপন এবং সাধারণ সম্পাদক জুয়েলের একদল অনুসারী ওই বারে মদ পান করার জন্য যান। মদ পান করার পর বিল চাওয়া হলে তারা বারের ম্যানেজারকে মারধর করে। এক পর্যায়ে তাদেরকে শান্ত করার চেষ্টা করেন বারের ম্যানেজার। তারপরও কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি রিপন মিয়া এবং সাধারণ সম্পাদক জুয়েল মোড়লকে তারা ফোন করে বিষয়টি জানায়। তখন হল থেকে শতাধিক ছাত্রলীগ নেতাকর্মী পাঠানো হয়। তারা গিয়ে বারের গেট তালাবদ্ধ দেখতে পেয়ে ভাঙচুর করে।
জানতে চাইলে জাকারিয়া বারের দায়িত্বরত ব্যক্তি উজ্জল মিয়া বলেন, শনিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে তিতুমীর কলেজের কিছু ছেলে নিজেদের মধ্যে মারামারি করে। তারপর আমাদের বারে এসে হামলা করে। এ সময় ক্যাশ ভেঙে ৩ লাখ ২০ হাজার টাকা লুট করে নিয়ে যায়। এ সময় ৭৫ ইঞ্চি একটি টিভি, ২০ থেকে ২৫টি চেয়ার ভাঙচুর করে। বারে থাকা প্রায় চার লাখ টাকার ৪০ বোতল ফরেন হুইস্কি লুট করে নিয়ে যায়, যার প্রতি বোতলের দাম ১০ হাজার টাকা। তারা আরও প্রায় ১ লাখ ৭৬ হাজার টাকার ৮০ বোতল কেরুর মদ লুট করে, যার প্রতি বোতলের দাম ২ হাজার ২০০ টাকা।
এ ছাড়াও আমাদের রিসিপশন ভেঙেছে, সেখানে ফটোকপির মেশিন ও দুটি কম্পিউটার ভেঙেছে। এ ঘটনায় ৪ থেকে ৫ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত ৫০ জনের নামে মামলা হয়েছে বনানী থানায়। আমরা আশা করি, বনানী থানা এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।
মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে পুলিশের গুলশান জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) আব্দুল্লাহ আল মাসুম বলেন, এরকম একটি ঘটনায় বনানী থানায় মামলা হয়েছে। মামলার তদন্তকাজ চলছে।
ভাঙচুর এবং লুটপাটে নেতৃত্ব দেন কলেজ শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুশফিকুর রহমান সাগর। এ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি লোকমান হোসেন রাহুল, সুলতান ও শাওন, সহসম্পাদক শাওন ও সাব্বির, উপ ধর্মবিষয়ক সম্পাদক নিলয় সেন, উপ ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক মামুন এবং কর্মী কাউসার ও শাহিন মাতব্বর প্রমুখ।
ছাত্রলীগের সহসভাপতি লোকমান হোসেন রাহুল বলেন, ঘটনার দিন রাতে আমি বাড়ি থেকে হলে যায়। এমন সময় খবর পাই আমার কিছু বন্ধু-বড় ভাইয়ের সঙ্গে বারের লোকজনের ঝামেলা হয়েছে। আমি বিষয়টা মিমাংসা করতে যাই। কিন্তু আমি মূল ঘটনায় ছিলাম না। আমার নামে মিথ্যা তথ্য ছড়ানো হচ্ছে।
আরেক অভিযুক্ত কলেজ শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মুশফিকুর রহমান সাগর বলেন, আমি এ ঘটনায় জড়িত না। আমি এ বিষয়ে কিছুই জানি না।
জানতে চাইলে তিতুমীর কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি রিপন মিয়া বলেন, এরকম একটি ঘটনা আমাকে বনানী থানার ওসি জানিয়েছেন। কিন্তু তারা ঘটনা ক্যাম্পাসের বাইরে করেছে। এটা তাদের ব্যক্তিগত অপকর্ম। এ বিষয়ে আমার কিছু করার নেই।
তিতুমীর কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হক জুয়েল মোড়ল বলেন, মদ্যপান ও বার ভাঙচুরের বিষয়ে আমার কোনো অনুসারী জড়িত নয়, বিষয়টি সম্পর্কেও আমি অবগত নই। তবে আমার অনুসারীদের মধ্যে কেউ জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান বলেন, আমি ঘটনাটি জানতাম না, খোজঁখবর নিচ্ছি। কেউ জড়িত থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেন, এ ধরনের কর্মকাণ্ড ছাত্রলীগের আদর্শের বিপরীত। এটা যদি ঘটে থাকে তারা শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছে। যদি কেউ জড়িত থাকে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন