মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবিতে কঠোর আন্দোলনের হুমকি দিয়ে আসলেও ‘আপাতত’ সংলাপেই সমাধান খুঁজছে বিএনপি। তবে প্রত্যাশিত সংলাপের সঙ্গে আন্দোলনের প্রস্তুতির বিষয়টিও সমান্তরালে এগোচ্ছে বলে দাবি করছেন দলটির শীর্ষ নেতৃবৃন্দ।
তারা বলছেন নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত সংলাপের আহ্বান জানানোর পাশাপাশি জাতিসংঘসহ বিশ্বসম্প্রদায়ের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখে সরকারকে সংলাপে বাধ্য করতেও প্রচেষ্টা চালাচ্ছে বিএনপি। তবে শেষ পর্যন্ত এ উদ্যোগ ব্যর্থ হলেই অহিংস থেকে রাজপথে সহিংস আন্দোলনে যাওয়া ছাড়া আর কোনো বিকল্প থাকবে না বলে মনে করেন দলের নীতিনির্ধারকরা।
বিএনপির বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতার সঙ্গে কথা বলে দলের এই অবস্থান সম্পর্কে জানা গেছে। এ প্রসঙ্গে দলের জেষ্ঠ্য নেতা ও বিএনপির অন্যতম স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম রাইজিংবিডিকে বলেন, বিএনপি সবসময়ই সংলাপের আহ্বান জানিয়ে আসছে। কিন্তু ক্ষমতাসীনরা বরাবরই তাতে আগ্রহ দেখাননি। তবে স্বাভাবিকভাবে চলমান রাজনৈতিক সংকটের সমাধান না হলে আন্দোলন ছাড়া বিএনপির সামনে আর কোনো পথ খোলা থাকবে না।
বিএনপির প্রত্যাশিত সংলাপের সময়সীমা অনির্দিষ্টকাল নয় বলে ইতিমধ্যে জানিয়ে দিয়েছেন স্বয়ং দলটির প্রধান বেগম খালেদা জিয়া। তিনি বলেছেন, ‘দেশে অশান্তি, সংঘাত, অস্থিরতা ও রাজপথের উত্তাল আন্দোলনে সহসা যেতে চাই না। এখনো সরকারকে আলোচনা ও সংলাপের পথে ফিরে আসার আহবান জানাচ্ছি।’ আলোচনার মাধ্যমে সকলের অংশগ্রহণের ভিত্তিতে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচন পরিচালনার উপযোগী একটি নির্দলীয় সরকার কাঠামোর ব্যাপারে সমঝোতায় আসার আহ্বান জানান তিনি।
স্বল্প সময়ের মধ্যে সংলাপের উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘জনগণ এমন একটি সংলাপের জন্য অনির্দিষ্টকাল বসে থাকবে, তা মনে করার কোনো কারণ নেই। সংলাপের উদ্যোগ না নিলে জনগণের দাবি আদায়ে চাপ প্রয়োগের জন্য দেশবাসীকে সঙ্গে নিয়ে শিগগিরই আমাদের রাজপথে আন্দোলনে নামতে হবে।’
দলীয় সূত্র জানায়, রাজপথে আন্দোলনে নামার আগে সরকারকে শেষ সময় পর্যন্ত সংলাপের আহ্বান জানাবে বিএনপি। এক্ষেত্রে সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে সরকার সংলাপে বসতে আগ্রহ দেখালেই সেক্ষেত্রে কিছুটা ছাড় দিতে পারে বিএনপি। তবে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিটিকেই আলোচনার বিষয়বস্তু হিসেবে দেখতে চায় দলটি। আর এটিকে শর্ত হিসেবে না দেখে সংলাপের এজেন্ডা হিসেবে দেখা উচিত বলে মনে করে বিএনপি।
দলটির একাধিক সূত্র জানিয়েছে, সংলাপে বসতে জাতিসংঘসহ বিশ্বসম্প্রদায়কে সরকারের ওপর চাপ অব্যাহত রাখার চিন্তাভাবনা করছেন দলের নীতিনির্ধারকরা। সংঘাতের চেয়ে সংলাপের মাধ্যমে সংকট নিরসন করার বিষয়টি বিএনপি বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। এ বিষয়ে দলের নীতিনির্ধারকদের একটি অংশ বহির্বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে।
সর্বশেষ জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকট নিরসনে বড় দলগুলোকে নিজেদের মধ্যে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে একটি গ্রহনযোগ্য সমাধান খুঁজে বের করার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘আলোচনার মাধ্যমেই একটি সমাধান বের করা উচিত। যে সমাধান বাংলাদেশের মানুষের কাছে গ্রহনযোগ্য হবে এবং আন্তর্জাতিক সমাজও মেনে নেবে।’
বিএনপির একটি সূত্র জানায়, ১৭ সেপ্টেম্বর চায়না সরকারের আমন্ত্রনে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল চীন সফরে যাচ্ছেন। ১০ সদস্যের ওই প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে থাকছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান। সফরে দেশের চলমান রাজনৈতিক ‘সংকট’ এবং সংলাপের প্রয়োজনীয় নিয়ে চীন সরকারকে অবহিত করবে দলটি।
বিএনপি চেয়ারপারসনের ঘনিষ্ট দুজন উপদেষ্টা রাইজিংবিডিকে বলেছেন, বিএনপি আলোচনার মাধ্যমে সংকট সমাধান চেয়ে আসছে। কিন্তু সরকারের আচরনে মনে হচ্ছে, অহিংস আন্দোলন দিয়ে দাবি আদায় হবেনা। কারন বিএনপি বারবার সংলাপের আহ্বান জানালেও ক্ষমতাসীনরা সেটিকে দুর্বলতা হিসেবে দেখে তাতে সাড়া দিচ্ছেনা।
তারা বলেন, এরপরও বিএনপি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত সংলাপকে সর্বোচ্চ প্রধান্য দেবে। এতে সরকারের বোধোদয় হলে ভালো, না হলেও ক্ষতি নেই। কারন জনগণ জানবে বিএনপি সমঝোতার জন্য শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করেছে। তখন দাবি আদায়ে রাজপথে নামলে জনগণের স্বত:স্ফূর্ত সমর্থন থাকবে বলে বিশ্বাস করে বিএনপি।
সূত্র জানায়, গত ডিসেম্বরে জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকোর উপস্থিতিতে দুই দলের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে যে সংলাপ হয়েছিল সেটাকে সামনে রেখেই এগোতে চায় বিএনপি। ওই সংলাপে আওয়ামী লীগ দশম সংসদ নির্বাচন পরবর্তী সংলাপের ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি দেয়ছিলো বলে দাবি করছে বিএনপি। যদিও ক্ষমতাসীনরা বলছে, নির্বাচন পরবর্তী কোনো সংলাপের ব্যাপারে আলোচনা হয়নি। পাশাপাশি ২০১৯ সালের আগে কোনো নির্বাচন নয়-বলেও মন্তব্য তাদের। তবে বিএনপি সেই সংলাপের ধারাবাহিকতায় জাতিসংঘের উপস্থিতিতে আবারো সংলাপ চায়। এসব প্রক্রিয়ায় সংলাপের পরিবেশ সৃষ্টি না হলে রাজপথকেই বেছে নেবে দলটি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান রাইজিংবিডিকে বলেন, সংলাপ গণতন্ত্রের জন্য অপরিহার্য। ৫ জানুয়ারির আগে জনগণ যখন আন্দোলন করেছে, তখন সরকার এটাকে সংবিধান রক্ষার নির্বাচন বলেছিলো। কথা ছিলো, আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচনের প্রক্রিয়া নিয়ে পরে সংলাপ হবে। অথচ ‘প্রহসনের নির্বাচন’ করার পর তারা তাদের সেই অবস্থান থেকে সরে এসেছে।
তিনি বলেন, বিএনপি একটি প্রতিযোগিতামুলক নির্বাচন চায়। কিন্তু সরকার জানে, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তাদের অস্তিত্ব থাকবেনা। নির্বাচনে পরাজয়ের ভয়ে তারা সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করতে চায়না।
অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকোর মধ্যস্ততায় আলোচনার বিষয়বস্তু গণমাধ্যমকে না জানানো বিএনপির রাজনৈতিক ভুল কিনা জানতে চাইলে বিএনপির এ নেতা বলেন, ‘যখন এ ধরনের আলোচনা হয়, তখন কি প্রকাশ করা হবে, আর কি হবেনা; তা আলোচনায় আলোচিত হয়। বিএনপি একটি গণতান্ত্রিক ও গঠনমূলক রাজনীতিতে বিশ্বাসী একটি দল হিসেবে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করেছে। কিন্তু দুর্ভাগ্য দলের এই দায়িত্বশীল আচরনকে দুর্বলতা হিসেবে দেখা হয়।
পাঠক মন্তব্য
AMRA POLITICS THAKE MUKTHI CHAI. APNARA POTI 5BOSOR POR KAR HATHA KHOMOTHA DIE NIRBACHON KORBEN,SHOB DHOL MILE 1BER BOSHA THIK KORTHA PAREN.POTHAK BOSOR AE ANDOLON KORA LAGE NA.R BANGLER MANUS APNADER SHOB DHOLIO PATIR HOIRANI THAKE MUKTI PAI.
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন