মূল্যের ঊর্ধ্বমুখী প্রতিরোধে প্রথম দফা ৩০ শতাংশ কমিয়ে আনার পর এবার দ্বিতীয় দফা চালের ওপর শুল্ক তুলে নেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে এ প্রক্রিয়া শুরু করেছে অর্থ বিভাগ এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। সংশ্লিষ্টদের মতে, দ্বিতীয় পর্যায়ে ২০ শতাংশ, অর্থাৎ আমদানি শুল্ক (সিডি) ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে শূন্য শতাংশ এবং নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক (আরডি) ৫ শতাংশ থেকে শূন্য শতাংশে নিয়ে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব অর্থ বিভাগ থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে পাঠানো হয়েছে। পর্যালোচনার পর সেটি প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করা হবে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
এর আগে চালে আমদানি শুল্ক (সিডি), নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক (আরডি), অগ্রিম আয়কর (এআইটি) ও আগাম কর (এটি) মিলে ছিল ৬২ দশমিক ৫০ শতাংশ। এনবিআর ২০ অক্টোবর এআইটি ছাড়া চাল আমদানিতে তিন ধরনের শুল্ক কমায়। সিডি ২৫ থেকে কমিয়ে ১৫ ও আরডি ২০ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করে এনবিআর। এছাড়া আগাম কর ৫ শতাংশের পুরোটাই প্রত্যাহার করে সংস্থাটি। সর্বশেষ প্রস্তাব কার্যকর হলে সিডি ও আরডি খাতে কোনো শুল্ক থাকছে না।
অর্থ বিভাগের প্রস্তাব প্রাপ্তির কথা স্বীকার করে এনবিআরের একজন কর্মকর্তা যুগান্তরকে জানান, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়টি মাথায় নিয়ে কার্যক্রম চলছে। শিগ্গিরই তা প্রজ্ঞাপন আকারে জারি করা হতে পারে।
দ্বিতীয় দফা শুল্ক কমানোর প্রক্রিয়ার আগে মঙ্গলবার বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (বিটিটিসি) চাল আমদানিতে সব ধরনের শুল্ক ও কর প্রত্যাহারের সুপারিশ করেছে। বাজার স্থিতিশীল রাখতেই সংস্থাটি প্রস্তাব করে বলেছে, সম্প্রতি বন্যায় চালের উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে, যা স্থানীয় বাজারে সরবরাহ বৃদ্ধি ও মূল্য স্থিতিশীল করার স্বার্থে সুনির্দিষ্ট মেয়াদে চাল আমদানি দরকার। সেক্ষেত্রে প্রযোজ্য আমদানি শুল্ককর সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাহার করা যেতে পারে। সেখানে আরও বলা হয়, শুল্ক সম্পূর্ণ মওকুফ করা হলে চালের দাম বৃদ্ধি রোধ করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি থাইল্যান্ড ও ভারতের মতো আন্তর্জাতিক বাজার থেকে আমদানি উৎসাহিত হবে।
বন্যার কারণে সাত থেকে আট লাখ টন চাল উৎপাদন কম হয়েছে-এমন হিসাব সামনে রেখে বিটিটিসি চেয়ারম্যান মইনুল খান বলেন, বাজার ঠিক রাখতে শুল্ক প্রত্যাহার করা এখন জরুরি।
একইভাবে খাদ্য অধিদপ্তরও ‘বন্যার কারণে চাল উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে বলে সতর্ক করে চিঠি দিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়কে। সেখানে বলা হয়, ১০ লাখ টন চাল আমদানির কার্যক্রম গ্রহণ জরুরি। অর্থবছরের বাকি সময় উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে এ বিপুল পরিমাণ চাল আমদানি করা কঠিন হতে পারে। তাই উন্মুক্ত দরপত্রের পাশাপাশি সরকার থেকে সরকার (জিটুজি) পর্যায়ে চাল আমদানির উদ্যোগ নেওয়া দরকার। বন্যায় আমন ধানের ক্ষয়ক্ষতি বিবেচনায় বেসরকারি পর্যায়েও চাল আমদানিতে উৎসাহিত করতে হবে মনে করছে খাদ্য অধিদপ্তর।
এ প্রস্তাবের পর অর্থ বিভাগও বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। সম্প্রতি এ নিয়ে একটি বৈঠক হয়। সেখানে প্রযোজ্য হারে শুল্ক তুলে নেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে অর্থ উপদেষ্টা দেশে উপস্থিত না থাকায় প্রক্রিয়াটি থেমে থাকে। মঙ্গলবার অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ দেশে আসার পর এ প্রস্তাবে ইতিবাচক সায় দিয়েছেন। এরপর সেটি কার্যক্রমের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, যা এনবিআর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে।
সূত্রমতে, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত চাল আমদানির পরিমাণ ১ হাজার ৯৫৭ টন। গত অর্থবছরের একই সময়ে আমদানি হয় ৯৩৪ দশমিক ১৮ টন। আর ২০২২-২৩ অর্থবছরে আমদানি হয় ১২ লাখ ৩৭ হাজার ১৬৮ টন চাল। এর আগে শুল্ক কমানোর পর এনবিআর বলেছিল, এতে বাজারে শুধু চালের সরবরাহ বাড়বে না; বরং আমদানি পর্যায়ে প্রতি কেজি চালের দাম ১৪ টাকা ৪০ পয়সা কমবে। তবে বেসরকারি আমদানিকারকরা বলছেন, এর আগে প্রথম দফায় শুল্ক কমানোর পরও খুব বেশি চাল আমদানি হয়নি। কারণ, ভারতসহ অন্যান্য দেশে চালের দাম বাড়তি থাকায় আমদানিকৃত প্রতি কেজি চালের দাম পড়বে প্রায় ৬৬ টাকা। এ দামে আমদানি করা হলে দেশের বাজারে দাম আরও বেড়ে যাবে।
সূত্রমতে, শুল্ক কমানোর পর ২৭ অক্টোবর ভিয়েতনাম থেকে বেসরকারিভাবে ২৬ টন চাল আমদানির জন্য ঋণপত্র (এলসি) খোলা হয়েছে। এলসি খোলার এমন কম প্রবণতা চালের বর্ধিত চাহিদা পূরণের জন্য ঝুঁকিপূর্ণের দিকে যাচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
খাদ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত সরকারের হাতে ১০ লাখ টন চালের মজুত ছিল। ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আমন সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ৫ লাখ টন এবং জুন পর্যন্ত বোরো সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ৬ লাখ টন। সে হিসাবে ২০২৫ সালের ১ জুলাই পর্যন্ত সম্ভাব্য মজুত দাঁড়াবে ২১ লাখ টন।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের তথ্য অনুযায়ী, বুধবার বাজারে সরু অর্থাৎ নাজিরশাইল ও মিনিকেট বিক্রি হয়েছে ৭২ থেকে ৮০ টাকা কেজি। এ ছাড়া মাঝারি, অর্থাৎ পাইজাম চাল ৫৮ থেকে ৬৩ এবং মোটা অর্থাৎ স্বর্ণা বা চায়না ইরি চাল ৫২ থেকে ৫৫ টাকা কেজি বিক্রি হয়েছে।
বাজারের বড় ব্যবসায়ীদের মতে, কিছুদিন পর আমন মৌসুম শুরু হবে। তখন দেশে চালের দাম আরও কমবে। এছাড়া বর্তমান ডলারের দাম বেশি, এলসি খোলা সমস্যা আছে। যে কারণে শুল্ক কমলেও কেউ এলসি খুলেছে না।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন