১৫ আগস্ট সাধারণ ছুটি বাতিল হলেও জাতীয় শোক দিবস এখনও বহাল রয়েছে। তবে, শোক দিবসে রাষ্ট্রীয়ভাবে কোনও কর্মসূচি পালিত হচ্ছে কিনা তা জানা যায়নি। গণভবন সূত্র থেকে শোক দিবসে রাষ্ট্রপতির কোনও কর্মসূচি পাওয়া যায়নি। সরকারের তরফেরও কোনও কর্মসূচি জানা যায়নি।
জাতীয় শোক দিবসে অন্যান্য বছর রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী বিশেষ বাণী প্রদান করলেও এবার রাষ্ট্রপতি কিংবা প্রধান উপদেষ্টার কোনও বাণী পাওয়া যায়নি। সরকারি সংবাদ সংস্থা বাসস থেকেও এ সংক্রান্ত কোনও সংবাদ রিলিজ করা হয়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর ১৯৯৬ সালের ১৫ আগস্ট দিনটি প্রথম জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পালিত হয়। এর আগে বঙ্গবন্ধুর দল আওয়ামী লীগসহ কিছু রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় দিবসটি পালন করতো।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ১৫ আগস্টকে জাতীয় শোক দিবস ঘোষণা করে রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন শুরু হয়। পাশাপাশি ১৫ আগস্ট সরকারি ছুটিও ঘোষণা করা হয়। এছাড়া পতাকা বিধি সংশোধন করে ১৫ আগস্ট জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখার সিদ্ধান্ত হয়। তবে ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর ২০০২ সালে মন্ত্রিসভার এক বৈঠকে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস ও সাধারণ ছুটি বাতিল করা হয়। এছাড়া জাতীয় পতাকা বিধি আবারও সংশোধন ১৫ আগস্ট অর্ধনমিত রাখার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। এর ফলে ২০০২ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত দিনটি রাষ্ট্রীয়ভাবে পালিত হয়নি। তবে, তিন আইনজীবীর রিটের প্রেক্ষিতে ২০০৮ সালের ২৭ জুলাই হাইকোর্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের দিন ১৫ আগস্টকে জাতীয় শোক দিবস ও সরকারি ছুটি বাতিলের সিদ্ধান্তকে অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেয়। এরফলে ২০০৮ সালে ফখরুদ্দীন আহমেদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার বঙ্গবন্ধুর ৩৩তম মৃত্যুবার্ষিকীকে রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করে এবং ওইদিন সরকারি ছুটিও পুনর্বহাল করা হয়। ওইদিন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ড. ইয়াজ উদ্দিন আহমেদ এবং প্রধান উপদেষ্টা ড. ফখরুদ্দীন আহমদ টুঙ্গীপাড়ায় শেখ মুজিবুর রহমানের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। সে সময় সেখানে তিন বাহিনীর প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন। এরপর থেকে ধারাবাহিকভাবে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে।
মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে ১৫ আগস্টের ছুটি বাতিল করা হয়। তবে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসের বিষয়ে কিছু বলা হয়নি।
সরকারি ছুটি বাতিলের বিষয়ে বুধবার (১৪ আগস্ট) সরকারের তথ্য বিবরণীতে বলা হয়েছে— ‘উপদেষ্টা পরিষদের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ঘোষিত ১৫ আগস্টের সাধারণ ছুটি বাতিল করার বিষয়ে ঐকমত্য হওয়ায়, উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকের সিদ্ধান্তক্রমে সরকার জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ঘোষিত ১৫ আগষ্টের সাধারণ ছুটি বাতিল করেছে।’
সরকারের কর্মসূচির বিষয়ে জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তথ্য কর্মকর্তা কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তাপস কুমার বিশ্বাস বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘হাইকোর্টের আদেশে ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস পালন ও সরকারি ছুটি বহাল হলেও এটি কার্যকর হয় কিন্তু নির্বাহী আদেশে। কাজেই নির্বাহী বিভাগ চাইলে নতুন আদেশ করে তা বাতিল করতে পারে। সরকার নির্বাহী আদেশে ছুটি বাতিল করেছে। জাতীয় শোক দিবসের বিষয়ে সরকারের কোনও সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি। কাজেই বলতে পারি, ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস বহাল রয়েছে। তবে, এ বিষয়টি সরকারের সংশ্লিষ্টরা যথাযথ ব্যাখ্যা দিতে পারবেন।’
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন