বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পালিয়ে দিল্লি এলেও কোন দেশে আশ্রয় পেতে চলেছেন, ভারত সরকার এখনো তা জানে না। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গতকাল বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার পরিকল্পনা কী, সে বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো খবর নেই। তিনি কী করবেন, কোথায় থাকবেন তাঁকেই ঠিক করতে হবে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশের গণঅভ্যূত্থানে শেখ হাসিনার পতন ও হাসিনার ভবিষ্যৎ নিয়ে মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সোয়াল নানা প্রশ্নের উত্তর দেন। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠন হওয়ার প্রাক্কালে এই ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, ভারতের কাছে বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থই প্রধান বিবেচ্য। ভারতের আশা, কালক্ষেপণ না করে অতি দ্রুত এই প্রতিবেশী দেশের আইনশৃংখলা পরিস্থিতির উন্নতি হবে। দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়া বাংলাদেশ তো বটেই অঞ্চলের সবার জন্যও মঙ্গল। কোটা আন্দোলন শুরু হওয়ার পর বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে ভারত শুধু বলেছিল, সে দেশে যা হচ্ছে, তা তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়। সেই সঙ্গে আশা প্রকাশ করেছিল, পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক হবে ও শান্তি ফিরে আসবে। পালাবদলের পর সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশত্যাগী হয়ে ভারতে পৌঁছান। পরের দিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভারতীয় সংসদে বিবৃতি দেন।
বিবৃতিতে মোটামুটি যা বলা হয়েছে, তার বাইরে গুরুত্বপূর্ণ বহু প্রশ্নের জবাব মুখপাত্র এড়িয়ে যান। যেমন হাসিনা কোন দেশে যাবেন, তিনি ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন কি না, তার আশ্রয়ের জন্য ভারত চেষ্টা চালাচ্ছে কি না, কিংবা তার সঙ্গীদের অন্যত্র আশ্রয় পেতে ভারত উদ্যোগী কি না।
এসব প্রশ্নের জবাবে মুখপাত্র বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিবৃতির বাইরে তার বিশেষ কিছুই বলার নেই। হাসিনার পরবর্তী পরিকল্পনা নিয়েও কিছু জানা নেই। সেই পরিকল্পনা তাঁকেই ঠিক করতে হবে। স্পষ্টতই, এই সন্ধিক্ষণে ভারত অতি সতর্ক।
তবে রণধীর জয়সোয়াল স্বীকার করেন, যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামির সঙ্গে গতকাল বৃহস্পতিবার জয়শঙ্করের কথা হয়েছে। সেই আলাপচারিতায় অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়েও কথা হয়েছে। এই আলোচনার কথা জয়শঙ্কর নিজেই এক্স হ্যান্ডলে লিখে বলেন, ‘ডেভিড ল্যামি ফোন করেছিলেন। পশ্চিম এশিয়া ও বাংলাদেশ পরিস্থিতি নিয়ে কথা হয়েছে।’
ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশে হিন্দু সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা, লুটপাট, হিন্দু মন্দির ধ্বংস নিয়েও প্রশ্ন করা হয়। জবাবে রণধীর জয়সোয়াল বলেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বিবৃতিতেও এই বিষয়ে মন্তব্য করা হয়েছে। সংখ্যালঘুদের অবস্থা নিয়ে আমরা বারবার খোঁজ করছি। যদিও কতজন নিহত, আহত, আক্রান্ত, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, সেই হিসাব আমাদের কাছে নেই।
জয়সোয়াল বলেন, নাগরিকদের রক্ষার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। স্বাভাবিকভাবেই অবস্থার উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন থাকব। আমাদের আশা, দ্রুত বাংলাদেশের পরিস্থিতির উন্নতি হবে। সেটা হওয়া দুই দেশ ও এই অঞ্চলের স্বার্থে জরুরি।
সংখ্যালঘুদের রক্ষায় সে দেশের বহু গোষ্ঠী ও সংগঠন এগিয়ে এসেছে বলেও জয়সোয়াল মন্তব্য করেন। মুখপাত্র বলেন, বাংলাদেশের পরিস্থিতি দ্রুত বদলে যাচ্ছে। অন্তবর্তী সরকারের শপথ অনুষ্ঠানে। সব দেশের রাষ্ট্রদূতদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে শুনেছি। ভারতের হাইকমিশনারের যাওয়ার কথা। আমি আবার বলতে চাই, আমাদের কাছে বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থই প্রধান বিবেচ্য।
পালাবদলের পর বাংলাদেশে ভারতের বিভিন্ন ক্ষেত্রে লগ্নি, প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে দেওয়া ঋণের সদ্ব্যবহার ও দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য হুমকির মধ্যে পড়বে কি না, জানতে চাওয়া হয়। প্রশ্ন করা হয়, ত্রিপুরাসহ কোনো কোনো সীমান্তে বহু মানুষ জড়ো হয়েছেন ভারতে আসার তাগিদে। তাঁদের জন্য ভারতের নীতি কী।
জবাবে মুখপাত্র বলেন, লগ্নি ও বাণিজ্য নিয়ে আলোচনা হবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর। সরকার গঠনের পর। আশ্রয়প্রার্থীদের নিয়ে কোনো মন্তব্য তিনি করেননি। অন্তবর্তী সরকারের প্রতি ভারতের প্রত্যাশা কী, সে বিষয়েও মন্তব্য না করে বলা হয়, বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থই ভারতের প্রধান বিবেচ্য।
বাংলাদেশে পালা বদলের পেছনে আইএসআই ও যুক্তরাষ্ট্রের হাত আছে বলে শেখ হাসিনা যে মন্তব্য করেছেন, সে বিষয়েও প্রশ্ন করা হয়। উত্তরে রণধীর জয়সোয়াল বলেন, ঘটনাক্রম বিশ্লেষণ করা হচ্ছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন