শিক্ষকতার মধ্য দিয়ে পেশা জীবন শুরু করেছিলেন মুহাম্মদ ইউনূস। পরে হয়ে যান সামাজিক উদ্যোক্তা। অর্জন করেন নোবেল পুরস্কার। এসবের পরও জেলে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল তার। গত ৫ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিচার হওয়ার কথা ছিল ঢাকার একটি আদালতে। একটি দুর্নীতি মামলায় তার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পর্যন্ত হতে পারত। কিন্তু মাত্র দুই দিনের ব্যবধানে ঘুরে গেলো তার ভাগ্যের চাকা। বিচারের মুখোমুখি হওয়ার পরিবর্তে তিনি বাংলাদেশের সেনাসমর্থিত অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান নিযুক্ত হলেন। বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) বঙ্গভবনে অন্তর্বর্তী সরকারের সদস্যদের নিয়ে শপথ নিলেন তিনি।
শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিশ্বজুড়ে আলোচিত তার ‘তিন শূন্য তত্ত্বের’ জন্য। সেগুলো হচ্ছে দারিদ্র্য, বেকারত্ব ও কার্বন নিঃসরণ শূন্যে নামিয়ে আনা। আর তা অর্জনে লাগবে তারুণ্য, প্রযুক্তি, সুশাসন ও সামাজিক ব্যবসা। টেকসই উন্নয়নের এই তত্ত্বের প্রয়োগের মাধ্যমেই তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে এগিয়ে নিতে চাইবেন বলে ধারণা বিশ্লেষকদের।
গ্রামীণ ব্যাংক ও ক্ষুদ্রঋণ ধারণার প্রবর্তক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। শিক্ষকতা পেশায় থাকা অবস্থায়ই তিনি প্রতিষ্ঠা করেন গ্রামীণ ব্যাংক। পরে ওই ব্যাংককে সঙ্গে নিয়ে শান্তিতে নোবেল পান ২০০৬ সালে।
শুধু তাই নয়, বিশ্বের ২৪টি দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৬১টি সম্মানসূচক ডিগ্রি পেয়েছেন তিনি। তার ঝুলিতে আছে ৩৩টি দেশের ১৩৬টি সম্মাননা। এর মধ্যে আছে ১০টি দেশের রাষ্ট্রীয় সম্মাননা। এখন পর্যন্ত নোবেল শান্তি পুরস্কার, ইউনাইটেড স্টেটস প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অব ফ্রিডম এবং ইউনাইটেড স্টেটস কংগ্রেশনাল গোল্ড মেডেল পাওয়া মাত্র সাত ব্যক্তির মধ্যে তিনি একজন। এর বাইরেও তিনি বেশকিছু ইউরোপীয় দেশের রাজকীয় সম্মাননা পেয়েছেন। বাংলাদেশ ছাড়িয়ে বিশ্বেও সুনাম কুড়িয়েছিলেন তিনি। কিন্তু নিজ দেশেই গত দেড় দশকেরও বেশি সময় ধরে ছিলেন কোণঠাসা। কর্তৃত্ব হারিয়েছিলেন নিজের প্রতিষ্ঠিত সেই গ্রামীণ ব্যাংকের।
প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস ১৯৯৬ সালে সাবেক প্রধান বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বে গঠিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন।
পরে নোবেল পুরস্কার অর্জনের মাত্র পাঁচ মাসের মাথায় রাজনৈতিক দল গঠনের কার্যক্রম করে সবাইকে অবাক করে দিয়েছিলেন অধ্যাপক ইউনূস। তার এই উদ্যোগ আসে এমন এক সময়ে যখন (২০০৭ সালে) সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে সরাতে ‘মাইনাস টু ফর্মুলা’ বেশ আলোচনায় ছিল।
পরে ২০০৯ সালে শেখ হাসিনা সরকার গঠনের পর গত দেড় দশকের বেশি সময় ধরে ব্যাংকের কর্তৃত্ব হারানোসহ বিভিন্ন মামলায় আদালতে বারবার হাজিরা দিতে হয়েছে অধ্যাপক ইউনূসকে। গ্রেফতারের আশঙ্কায়ও ছিলেন তিনি।
জন্ম ও শিক্ষাজীবন
মুহাম্মদ ইউনূস ১৯৪০ সালের ২৮ জুন ব্রিটিশ ভারতের বাংলা প্রেসিডেন্সির (বর্তমান বাংলাদেশ) চট্টগ্রামের হাটহাজারির কাপ্তাই সড়কের বাথুয়া গ্রামে একটি বাঙালি মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ৯ ভাইবোনের মধ্যে তিনি তৃতীয়। তার পিতা হাজী দুলা মিয়া সওদাগর ছিলেন একজন জহুরি। মায়ের নাম সুফিয়া খাতুন। তার শৈশব কাটে গ্রামে। ১৯৪৪ সালে তার পরিবার চট্টগ্রাম শহরে চলে আসে এবং তিনি তার গ্রামের স্কুল থেকে লামাবাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চলে যান।
১৯৪৯ সালের দিকে ড. ইউনূসের মা মানসিক অসুস্থতায় ভুগতে শুরু করেন। পরবর্তীতে তিনি চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল থেকে মেট্রিকুলেশন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন এবং পূর্ব পাকিস্তানের ৩৯ হাজার ছাত্রের মধ্যে ১৬তম স্থান অধিকার করেন।পরে চট্টগ্রাম কলেজে ভর্তি হন।
বিদ্যালয় জীবনে তিনি একজন সক্রিয় বয় স্কাউট ছিলেন। চট্টগ্রাম কলেজে পড়াশোনার সময় তিনি সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডেও সক্রিয় হন। ১৯৫৭ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে ভর্তি হন এবং ১৯৬০ সালে বিএ এবং ১৯৬১ সালে এমএ সম্পন্ন করেন।
কর্মজীবন
স্নাতক শেষ করার পর প্রফেসর ইউনূস নুরুল ইসলাম ও রেহমান সোবহানের অর্থনৈতিক গবেষণায় গবেষণা সহকারী হিসেবে অর্থনীতি ব্যুরোতে যোগ দেন। পরবর্তীতে তিনি ১৯৬১ সালে চট্টগ্রাম কলেজে অর্থনীতির প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ পান। একই সময়ে তিনি পাশাপাশি একটি লাভজনক প্যাকেজিং কারখানা স্থাপন করেন।
১৯৬৫ সালে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনার জন্য ফুলব্রাইট স্কলারশিপ পান ১৯৭১ সালে ভ্যান্ডারবিল্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রাম ইন ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট থেকে অর্থনীতিতে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৬৯ থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত মার্ফ্রিসবোরোতে মিডল টেনেসি স্টেট ইউনিভার্সিটিতে অর্থনীতির সহকারী অধ্যাপক ছিলেন ইউনূস।
১৯৭২ সালে দেশে ফিরে তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন এবং বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৫ সালে তিনি অধ্যাপক পদে উন্নীত হন এবং ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত এ পদে কর্মরত ছিলেন।
এই সময়ের মধ্যেই ১৯৭৬ সালে তিনি গ্রামীণ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেন। ক্ষুদ্রঋণের ধারণার মাধ্যমে সারা বিশ্বে একটি সাড়া ফেলে গ্রামীণ ব্যাংক।
জোবরা গ্রাম থেকে নোবেল জয়
চট্টগ্রামের জোবরা গ্রামের সেই নবযুগ খামার থেকে প্রফেসর ইউনূস ের হাত ধরে ১৯৭৬ সালে প্রতিষ্ঠার থেকে শুরু হয় গ্রামীণ ব্যাংকের। যেখান থেকে ধীরে ধীরে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে এর কার্যক্রম। এখন বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় সেই সামাজিক ব্যবসা ধারণা ছড়িয়ে পড়েছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ‘রুরাল ইকনোমিকস প্রোগ্রামের’ প্রধান অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস তখন জোবরা এবং সংলগ্ন গ্রামগুলোতে শুরু করেছিলেন একটি মাঠ গবেষণা, যেখানে তিনি যাচাই করতে চেয়েছিলেন সমাজের একেবারে নিচুতলার মানুষের মধ্যে ব্যাংক ঋণ সরবরাহের সম্ভাব্যতা। সেখানে শুরুতে তেভাগা পদ্ধতি কৃষকদের খামার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমের কার্যক্রম শুরু করেন অধ্যাপক ইউনূস, যার নাম ছিল নবযুগ তেভাগা খামার। এই কৃষকদের খামার থেকেই গ্রামীণ ব্যাংকের ভিত্তি রচিত হয়েছিল ১৯৭৬ সালে।
পরবর্তীতে 'ক্ষুদ্রঋণ' নামে সম্পূর্ণ নতুন একটি ধারনা নিয়ে বাংলাদেশে ১৯৮৩ সালের ২ অক্টোবর একটি পূর্ণাঙ্গ ব্যাংক হিসেবে আনুষ্ঠানিক জন্ম হয় গ্রামীণ ব্যাংকের। গ্রামীণ ব্যাংক মূলত ভূমিহীন ও দরিদ্র নারীদের পাঁচ জনের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দল গঠনের মাধ্যমে ক্ষুদ্রঋণ প্রদান করে এবং এ ঋণের মাধ্যমে তাদের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করে।
ব্যাংকের পরিধি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দরিদ্রদের রক্ষা করতে ব্যাংক অন্যান্য পদ্ধতিও প্রয়োগ করে। ক্ষুদ্রঋণের সঙ্গে যোগ হয় গৃহঋণ, মৎস্য খামার এবং সেচ ঋণ প্রকল্পসহ অন্যান্য ব্যাংকিং ব্যবস্থা। গরিবের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গ্রামীণ ব্যাংকের ফর্মুলা যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য শিল্পোন্নত দেশও ব্যবহার করতে উদ্বুদ্ধ হয়।
অধ্যাপক ইউনূসের গ্রামীণ ব্যাংকের এই কার্যক্রম বিস্তৃতি লাভ করলে ২০০৬ সালে যৌথভাবে নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করেন অধ্যাপক ইউনূস ও তার প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংক।
এছাড়া ২০১১ সালে ফেব্রুয়ারিতে সাস্কিয়া ব্রুইস্টেন, সোফি আইজেনম্যান এবং হ্যান্স রাইটজের সঙ্গে একত্রে সামাজিক ব্যবসা – গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভস প্রতিষ্ঠা করেন। ইউনূস সামাজিক ব্যবসা সারা বিশ্বে সামাজিক সমস্যাগুলি সমাধানের জন্য সামাজিক ব্যবসা তৈরি ও ক্ষমতায়িত করে। প্রফেসর ইউনূসের নতুন, মানবিক পুঁজিবাদের দৃষ্টিভঙ্গির আন্তর্জাতিক বাস্তবায়ন শাখা হিসেবে এই সামাজিক ব্যবসা উন্নয়নশীল দেশগুলিতে সামাজিক ব্যবসার জন্য ইনকিউবেটর তহবিল পরিচালনা করে এবং কোম্পানি, সরকার, ফাউন্ডেশন এবং এনজিওদের পরামর্শ সেবা প্রদান করে।
২০১২ সালে তিনি স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো ক্যালেডোনিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর হন এবং এই পদে তিনি ২০১৮ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। এর আগে তিনি বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতির অধ্যাপক ছিলেন।
তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান হওয়ার প্রস্তাব
২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি সেনাবাহিনীর সমর্থনে এবং ফখরুদ্দিন আহমদের নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হয়। তখন সেনাপ্রধান ছিলেন জেনারেল মইন ইউ আহমেদ। তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান ফখরুদ্দীন আহমেদ এবং সেনাপ্রধান উভয়ে মিলে ‘মাইনাস টু ফর্মুলা’ নামে একটি তত্ত্ব বাস্তবায়ন করতে চেয়েছিলেন, যেখানে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ নেত্রীকে নির্বাসিত বা বন্দি রেখে নতুন একটি সরকার গঠন করে রাষ্ট্র পরিচালনা করা। সেই সময় সেনাবাহিনী তাকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান হওয়ার দায়িত্ব নিতে বলেছিলেন। তবে তিনি তা নাকচ করে দেন।
এমন পরিস্থিতিতে ‘নাগরিক শক্তি’ নামে একটি দল গঠনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন তিনি। তবে পরে সেই প্রক্রিয়া থেকে সরে এসেছিলেন অধ্যাপক ইউনূস।
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সম্মাননা
শুধু অর্থনীতির পরিসরে নয়, আরও নানা ক্ষেত্রে রয়েছে তার সম্মাননা পাওয়ার নজীর। বিশ্বের সর্ববৃহৎ প্রতিযোগিতা যে আলিম্পক গেমস, ২০২০ সালে সেই আলিম্পক গেমসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সম্মানিত মেহমান ছিলেন প্রফেসর ইউনূস। ২০২৪ সালের প্যারিস অলিম্পিকের মূল থিমও করা হয়েছে প্রফেসর ইউনূসের সামাজিক ব্যবসা তত্ত্বের ওপর ভিত্তি করে।
তিনি ২০০৬ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার, ২০০৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অফ ফ্রিডম এবং ২০১০ সালে কংগ্রেসনাল গোল্ড মেডেল পান।
এছাড়া ১৯৭৮ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ড. ইউনূস জাতীয় ও আন্তর্জাতিকসহ প্রায় ১৪৫টি পুরস্কার অর্জন করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে- র্যামোন ম্যাগসেসে পুরস্কার (১৯৮৪), কেন্দ্রীয় ব্যাংক অ্যাওয়ার্ড (১৯৮৫), স্বাধীনতা পুরস্কার (১৯৮৭), আগা খান অ্যাওয়ার্ড (১৯৮৯), বিশ্ব খাদ্য পুরস্কার,যুক্তরাষ্ট্র (১৯৯৪), পিফার শান্তি পুরস্কার, যুক্তরাষ্ট্র (১৯৯৪), আন্তর্জাতিক সাইমন বলিভার পুরস্কার (১৯৯৬), হেল্প ফর সেলফ হেল্প পুরস্কার,নরওয়ে (১৯৯৭), শান্তি মানব পুরস্কার (ম্যান ফর পিস এওয়ার্ড), ইতালি (১৯৯৭), বিশ্ব ফোরাম পুরস্কার, যুক্তরাষ্ট্র (১৯৯৭), সিডনি শান্তি পুরস্কার, অস্ট্রেলিয়া (১৯৯৮), ইন্দিরা গান্ধী পুরস্কার, ইন্ডিয়া (১৯৯৮) ইত্যাদি।
আওয়ামী লীগের সঙ্গে বৈরিতা
২০০৬ সালে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস যখন নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হন, তখন একইসঙ্গে গ্রামীণ ব্যাংকও পেয়েছিল নোবেল পুরস্কার। পুরস্কার অর্জন করায় সে সময় বিরোধী দলে থাকা আওয়ামী লীগ সবার আগেই শুভেচ্ছা জানিয়েছিল। তবে ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর অধ্যাপক ইউনূসের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করতে থাকে দলটি এবং তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর শুরু গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে অব্যাহতি দেওয়ার মধ্য দিয়ে।
২০১১ সালের ২ মার্চ গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে অধ্যাপক ইউনূসকে অব্যাহতি দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক আদেশ জারি করে। এর বিরুদ্ধে ইউনূস ও গ্রামীণ ব্যাংকের ৯ জন পরিচালক দু’টি রিট মামলা করেছিলেন। দুটি রিট আবেদনই খারিজ করে দিয়ে হাইকোর্ট ড. ইউনূসকে তার পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আদেশ বহাল রাখে। পরে ওই বছরের ১২ মে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে ইস্তফা দেন অধ্যাপক ইউনূস।
ড. ইউনূসের প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ শক্তিসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান দখল করে নেয় সরকার সমর্থকরা। তার বিরুদ্ধে টাকা আত্মসাৎ, শ্রম অধিকার লঙ্ঘন, এমনকি বিদেশে বক্তৃতা থেকে তিনি যে সম্মানী পান, তা সরকারের করমুক্ত সুবিধার আওতায় বৈধ চ্যানেলে দেশে আনলেও তার বিরুদ্ধে বারবার ট্যাক্স ফাঁকির অভিযোগ আনা হয়।
ড. ইউনূসের প্রতি শেখ হাসিনার বৈরিতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও বারবার আলোচিত হয়। বিশ্বের প্রভাবশালী ব্যক্তি, রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান, নোবেলজয়ী থেকে শুরু করে নানা প্রান্ত থেকে তাকে বিচারিক হয়রানি না করার আহ্বান জানানো হলেও তাতে কোনও কর্ণপাত করেনি সরকার।
দেড় দশক ধরে অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও তার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ১৬৮টি মামলা করা হয়। এর মধ্যে ফৌজদারি আদালতে একটি, দুর্নীতি দমন কমিশনে একটি এবং বাকি ১৬৬টি মামলা ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতে বিচারাধীন ছিল। সর্বশেষ গত ৪ আগস্ট এক রায়ে হাইকোর্ট বলেছেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের পাওনা হিসেবে ৬৬৬ কোটি টাকা ড. ইউনূসকে পরিশোধ করতে হবে, তবে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে নাম আসার পর তার সেই সাজা মওকুফ করা হয়েছে।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন