রমজান সামনে রেখে ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। দামের ঊর্ধ্বগতি আকাশ ছুঁয়েছে অভিযোগ ভোক্তাদের। রমজান শুরু হওয়ার আর মাত্র কয়েক দিন বাকি। রমজান কেন্দ্র করে সরেজমিনে রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে ১১দিন আগেই ভোগ্যপণ্যের দামের ঊর্ধ্বগতি দেখা গেছে। প্রতিদিনের দরকারি পণ্য পেঁয়াজের পাইকারি মূল্য ১০০ টাকার ওপরে। খুচরা বাজারে তা কোথাও কোথাও ১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বুধবার রাজধানীর পুরান ঢাকার বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন দৃশ্য দেখা যায়।
সরেজমিনে রাজধানীর অন্যতম পাইকারি পেঁয়াজের বাজার শ্যামবাজারের ফরাশগঞ্জের পাইকারি আড়ৎ নিউ ভাই ভাই ট্রেডার্সে দেখা যায় দেশি পেঁয়াজের পাইকারি মূল্য ১০০—১০৭ টাকা। বিক্রেতা বলছেন, গত কয়েকদিন আগেও এই পেঁয়াজের পাইকারি মূল্য ছিলো ৮৮—৯৫ টাকার মধ্যে।
অন্যদিকে শ্যামবাজারের আশেপাশে খুচরা দোকানগুলোতে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ১২০—১৩০ টাকায়।
চিনির দাম কেজিতে ৭ থেকে ১২ টাকা বেড়ে ১৪৫—১৫০ টাকা হয়েছে। ২৫ দিন আগেও প্রতি কেজি খোলা চিনি পাইকারি বাজারে ১৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এখন সেটা ১৩৭ টাকা। প্যাকেটজাত চিনি বিক্রি হচ্ছে পাইকারি ১৪৫ টাকা করে।
শ্যামবাজারের মেসার্স শেখ স্টোরে খেসারির ডাল খুচরা বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকা, যেটা তিনদিন আগেও ১০০ টাকা ছিলো।
পুরান ঢাকার মুরগিটোলার মুরগি ব্যবসায়ী সুমন বলেন, ‘জানুয়ারির শেষদিকে মুরগি ১৮০ থেকে ১৮৫ টাকা করে বিক্রি করেছি। ফেব্রুয়ারি মাসের ১০ তারিখের পর দাম বাড়তে শুরু করে। শবে বরাতের আগের দিন ২১০ টাকা থেকে ২১৫ টাকা করে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে যা এখনো চলমান।’
রোজা ঘিরে এবার উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ছোলা আমদানি হয়েছে। তাতে বাজারে সরবরাহ বেড়েছে। বাজারে সরবরাহ ভালো থাকায় রোজায় ছোলার দাম বাড়বে না বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কথা।
আমদানিকারদের তথ্যমতে, রোজার মাস বাদে অন্য মাসগুলোতে দেশে প্রতি মাসে গড়ে ১০ হাজার টন ছোলার চাহিদা রয়েছে। রোজায় এ চাহিদা বেড়ে হয় ১ লাখ ২০ থেকে ৩০ হাজার টন।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, দেশে গত তিন মাসে (নভেম্বর—জানুয়ারি) প্রায় ৮৩ হাজার ৮৩২ টন ছোলা আমদানি হয়েছে।
কিন্তু সরেজমিনে শ্যামবাজারের আশপাশের খুচরা দোকানগুলোতে দেখা যায় ছোলা বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ১১০—১১৫টাকায়। মায়ের দোয়া স্টোরের বিক্রিতা বলেন, ‘মাসখানেক আগেও এই ছোলা বিক্রি করেছি ৮০—৮৫ টাকা আর এখন বিক্রি করতেছি ১১০ টাকা।’
রাজধানীর লক্ষীবাজারের সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের পাশে ভাড়া বাসায় থাকেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮জন শিক্ষার্থী। বাসার পরিচালক জবি শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান বলেন, ‘গত ডিসেম্বর মাসে আমাদের খাবারের ব্যয় হয়েছে ১৪ হাজার টাকা। গড়ে প্রতি বেলা খাবারের মূল্য ছিল ৪৫ টাকা। কিন্তু ফেব্রুয়ারি মাসে তা এসে দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার টাকায়, যেখানে প্রতি বেলা খাবারের গড় মূল্য এসে দাঁড়িয়েছে ৫৫ টাকা। একজনের খাবারের জন্য অতিরিক্ত খরচ হচ্ছে ১২০০ টাকা করে। যা শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতির ধাক্কায় মানসিকভাবে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। এতে বিঘ্ন হচ্ছে পড়ালেখা।’
তিনি আরও বলেন, এরজন্য ব্যবসায়ীদের পন্য মজুতকেই দায়ী করা যায়। কারণ রমজান উপলক্ষে যেখানে মধ্যপাচ্যের বাজারে দাম নিম্নমুখী সেখানে আমাদের দেশে ঊর্ধ্বমুখী। এমনিভাবে চলতে থাকলে আমাদের শিক্ষাজীবন মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হবে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চাকুরিজীবী এক ভোক্তা ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘সরকারের উচিত কঠোরভাবে বাজার মনিটরিং করা। বিশেষ করে যারা বড় বড় পাইকারি ব্যবসায়ী, তাদের মানি রিসিট দেখা প্রয়োজন। তারা কত টাকায় কিনলো এবং কত টাকায় বিক্রি করছে, তা দেখে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।’
বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু বলেছেন, সরকার রমজান মাসে পণ্যের সরবরাহ ঠিক রাখতে কাজ করছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা— সাধারণ মানুষ যেন ন্যায্যমূল্যে পণ্য পান। কোনো মিল কিংবা পণ্য আমদানিকারক ইচ্ছাকৃতভাবে পণ্য সরবরাহ না করলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বাজার মনিটরিং করে অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
উল্লেখ্য, রোজার আগে বাজারে পণ্যের দাম সহনীয় রাখতে গত ৮ ফেব্রুয়ারি চাল, চিনি, তেল ও খেজুরের শুল্ক—কর কমানোর ঘোষণা দেয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। তবে, এখনো তার কোনো প্রভাব পড়েনি বাজারে। বিপরীতে শুল্ক কমানোর ঘোষণায় ব্যবসায়ীরা বলছেন ভিন্ন কথা। যেমন খেজুরের শুল্ক প্রসঙ্গে, বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুট ইম্পোর্টার অ্যাসোসিয়েশন বলছে, খেজুরে শুল্ক কমানোর পরও কেজি প্রতি ৫৪—১৪৬ টাকা পর্যন্ত শুল্ক দিতে হচ্ছে। যেটা গত বছর ছিলো মাত্র ৫ টাকা থেকে সবোর্চ্চ ২১ টাকার মধ্যে।
ঢাকাটাইমস
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন