জেলা সদর ও উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দু হওয়ায় দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে পুরো জেলাবাসীর দৃষ্টি জামালপুর-৫ আসনে। বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে এখানে ভোটের লড়াই জমবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে।শুধু ১৯৯১ সালের নির্বাচনে এই আসনে জয় পায় বিএনপি। এর পর টানা পাঁচবার আসন ধরে রেখেছে আওয়ামী লীগ। আগামী নির্বাচনে দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতাদের সবাই অবস্থান করছেন ঢাকায়। তবে বিএনপি আছে কৌশলী অবস্থানে। নেতারা আছেন কেন্দ্রের নির্দেশের অপেক্ষায়।
এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা হলেন- বর্তমান এমপি ইঞ্জিনিয়ার মোজাফফর হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ বাকী বিল্লাহ, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান সিনিয়র সহ-সভাপতি ফারুক আহম্মেদ চৌধুরী, জেলা সাধারণ সম্পাদক বিজন কুমার চন্দ, জেলা তথ্য ও গবেষণাবিষয়ক সম্পাদক মুহাম্মদ সালেহীন রেজা, সদস্য রেজাউল করিম রেজনু, উপদেষ্টা মোহাম্মদ আলী, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মারুফা আক্তার পপি। এর মধ্যে দলীয় মনোনয়নপত্র কিনেছেন রেজাউল করিম রেজনু।
বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরা হলেন- ময়মনসিংহ বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শাহ মো. ওয়ারেছ আলী মামুন, সাবেক স্বাস্থ্য উপমন্ত্রী মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল হক ও সাবেক মহিলা এমপি নীলুফার চৌধুরী মনি। তবে সিরাজুল হক ও নীলুফার চৌধুরী মনি এলাকায় কোনো প্রচারে নেই। গত ১৭ বছর ধরে দল পরিচালনা করছেন ওয়ারেছ আলী মামুন। তিনি জামালপুর পৌরসভার দুই বারের নির্বাচিত মেয়র।
জাতীয় পার্টির সম্ভাব্য প্রার্থী হলেন পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও জামালপুর জেলা সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন খান। তিনি ৩৫ বছর ধরে পার্টির কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। এ আসনে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির মধ্যে আসন ভাগাভাগি হতে পারে বলে এলাকায় আলোচনা আছে।
আসনটি আওয়ামী লীগের দুর্গ হিসেবে পরিচিত হলেও একাদশ সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে এই আসনে এমপি নির্বাচিত হন ব্যবসায়ী ইঞ্জিনিয়ার মোজাফফর হোসেন। এতে কোণঠাসা হয়ে পড়েন দলটির মূল ধারার নেতাকর্মীরা। এ নিয়ে ক্ষোভ রয়েছে দলটির তৃণমূলে। তারা মনে করেন, বিএনপি নির্বাচনে এলে দলটির জনপ্রিয় প্রার্থীর বিপরীতে আওয়ামী লীগের শক্তিশালী প্রার্থী না থাকলে আসনটি হাতছাড়া হতে পারে।
নির্বাচন সামনে রেখে স্থানীয় সব জনপ্রতিনিধি ও সব ইউনিটের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সভা-সমাবেশ করছেন আওয়ামী লীগের ফারুক আহম্মেদ চৌধুরী ও রেজাউল করিম রেজনুসহ অন্য মনোনয়ন প্রত্যাশীরা।
জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ বাকী বিল্লাহ বলেন, আওয়ামী লীগের একটি গণতান্ত্রিক সৌন্দর্য আছে। নির্বাচনের আগে অনেক প্রার্থী থাকে। যখন মনোনয়ন হয়ে যায়, তখন সবাই এক হয়ে যায়। তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগে বাইরের লোক প্রবেশ করেছে। তারা এসব প্রোপাগান্ডা ছড়িয়ে নিজেদের মধ্যে ঐক্য বিনষ্ট করার চেষ্টা করছে। আগামী নির্বাচনে জামালপুরের জনসাধারণ আবারও ভোট দিয়ে পাঁচটি আসনেই আওয়ামী লীগকে জয়ী করবে। কারণ শেখ হাসিনা সরকারের আমলেই জননেতা মির্জা আজমের প্রচেষ্টায় জামালপুরে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। এসব উন্নয়নকাজ সমাপ্ত হলে জামালপুর হবে দেশের অন্যতম কয়েকটি জেলার একটি। এই কারণেই সাধারণ মানুষ আওয়ামী লীগকে ভোট দেবে।
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শাহ মো. ওয়ারেছ আলী মামুন বলেন, নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে কেন্দ্র থেকে এখনো সিদ্ধান্ত আসেনি। তাই এ বিষয়ে আগেই কিছু বলতে পারছি না। তবে দল নির্বাচনে এলে জামালপুরের ৫টি আসনে বিএনপি বিপুল ভোটে জয়ী হবে। কারণ বর্তমান সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়। তারা জনগণের ভোটাধিকার হরণ করেছে। আমরা জনগণের ভোটের অধিকারসহ সকল অধিকার প্রতিষ্ঠায় ১৭ বছর ধরে সংগ্রাম করছি। তাই সঙ্গত কারণে জনগণ বিএনপিকে ভোট দেবে।
এই আসনে মোট ভোটার ৫ লাখ ৪৬ হাজার ৬৮৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ ২ লাখ ৬৭ হাজার ৩০৮ জন এবং নারী ২ লাখ ৭৯ হাজার ৩৭৫ জন। এ ছাড়া তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ৭ জন।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন