ড. রাশেদা রওনক খান
আলোচনাটি কয়েকটি প্রশ্ন দিয়েই শুরু করতে চাই।
এক. বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে ধর্ষণের জন্য নিরাপদ ভাবতে পারার কারণ কী? ‘ক্ষমতা’র সঙ্গে এই নিরাপদ-‘বোধের’ চেতনা কীভাবে জড়িত?
দুই. এসব ধর্ষকের সামাজিক ও পারিবারিক পটভূমি কী?
তিন. ক্যাম্পাসের বাইরে তাহলে তারা কতটা হিংস্র, পৈশাচিক এবং বীভৎস?
চার. রাজনৈতিক শিক্ষার অভাব, সামাজিক ও পারিবারিক শিক্ষার অভাব, নাকি আমাদের রাষ্ট্রীয় ও সামাজিক ব্যবস্থাপনায় ত্রুটি- কোনটি দায়ী এ ধরনের অমানুষ তৈরির জন্য?
একজন শিক্ষার্থী যখন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করে, তারা কি কেবল কাগজে ছাপানো একটি ডিগ্রি নিয়ে যায়, নাকি সঙ্গে নেয় আরও অনেক কিছু? যদিও বিশ্বের সর্বত্রই শিক্ষাকে পণ্য বানিয়ে ফেলেছে এই নিউলিবারেল ইকোনমি, কিন্তু তারপরও আমি সবসময় বিশ্বাস করি, একজন শিক্ষার্থী একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কেবল ডিগ্রি নয়, সঙ্গে আরও অনেক কিছু গ্রহণ করে, নিজেকে পরিশুদ্ধ করে, তৈরি করে সামনের সময়ের জন্য। এমনকি পুরো পৃথিবীর জন্য।
বর্তমান বাস্তবতায় কয়েকশত ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীর বিপরীতে একজন শিক্ষার্থীর একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশের সুযোগ ঘটে। তীব্র প্রতিযোগিতার পর যখন একজন শিক্ষার্থী ভর্তি হওয়ার সুযোগ পায়, কোনও কোনও ক্ষেত্রে সেই শিক্ষার্থীর পরিবার শুধু নয়, পুরো এলাকা কিংবা গ্রাম খুশির জোয়ারে ভাসতে থাকে, তাদের অর্জনে গর্ববোধ করে। অর্থাৎ একজন শিক্ষার্থী যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে আসে তার সঙ্গে আসে পরিবার, এলাকা কিংবা গ্রামের মানুষের ভালোবাসা। যেখান থেকে এই ভালোবাসার প্রতি দায়িত্বও তৈরি হয় শিক্ষার্থীর ওপর। ফলে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেকেই দায়িত্বের জায়গা থেকে তাদের সব যোগ্যতা ঢেলে নিজেকে তৈরি করেন। তাই এতটুকু বলাই যায়, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় কেবল ডিগ্রি গ্রহণ ও প্রদানের স্থান নয়, সঙ্গে শিক্ষার্থীর মনোজগতে যুক্ত হতে থাকে আরও অনেক কিছু। অনেক মতাদর্শগত চিন্তাভাবনায় যেমন আসে পরিবর্তন ও পরিবর্ধন, তেমনই তৈরি হয় নানা আত্মিক যোগাযোগ, যা শিক্ষক ও শিক্ষার্থী হিসেবে আমাদের জন্য সারা জীবনের সঞ্চয়।
আমাদের দেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশা নির্বিশেষে শিক্ষার্থীরা শিক্ষা গ্রহণের উদ্দেশ্যে আসে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আমাদের দেশের প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো কিংবা বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো এত টিউশন ফি প্রদান করতে হয় না। কেননা, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল খরচের জোগান আসে জনগণের ট্যাক্স থেকে।
ফলে জনগণের প্রতিও রয়েছে শিক্ষার্থীদের অনেক বড় দায়িত্ব। অথচ কতজন শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ে বা পরবর্তীতে একবারও ভাবেন যে তারা জনগণের টাকায় পড়ছেন? যদি সবাই ভাবতেন তাহলে কী করে কেউ কেউ ক্যাম্পাসে এসে ধর্ষক হয়ে ওঠে? তাছাড়া আমরা যে ক্যাম্পাসে পড়ালেখা করি কিংবা পড়াই, সেই ক্যাম্পাস তো বটেই, যেকোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্যাম্পাসই তো আমাদের কাছে সবচেয়ে পবিত্র স্থান মনে হওয়ার কথা। সেই পবিত্র স্থানকে কলঙ্কিত করার দুঃসাহস কীভাবে হয়?
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকেই যে বা যারা ভালোবাসতে পারে না, তাদের কাছে এই দেশ আসলে কী আশা করতে পারে? সমস্যাগুলো আসলে কোথায়?
এবার উত্তরটা খোঁজার চেষ্টা করি:
শিক্ষার্থীরা প্রথম বর্ষে ভর্তির পরপরই পড়ালেখার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের সাংগঠনিক কাজে যুক্ত হয় ক্যাম্পাসে। খেলাধুলা, নাটক, সিনেমা, বিতর্কসহ নানা ধরনের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হয় এসব সংগঠন পরিচালনার মধ্য দিয়ে।
কেউ কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচিতিকে সামনে রেখে প্রাইভেট পড়ানোসহ নানা ধরনের অর্থনৈতিক আয়-উপার্জনে যুক্ত হয়।
অন্যদিকে কেউ কেউ যুক্ত হয় ছাত্র রাজনীতিতে। এই যুক্ততার পেছনে নানাবিধ কারণ থাকে, যেমন: আবাসিক হলগুলোতে সিট পাওয়ার জন্য, কখনও বড় ভাইদের ডাকে সাড়া দিয়ে, কখনও বা নিজস্ব ভালো লাগা থেকে কিংবা পারিবারিক পর্যায় থেকে রাজনৈতিক মূল্যবোধকে ধারণ করে।
এই প্রতিটি যুক্ততার নিজস্ব সৌন্দর্য আছে, কোনোটাই দোষের কিছু না। শেষটি নিয়ে নানা বিতর্ক থাকলেও এটাও সত্য যে ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্য, যদি সেখানে ভিন্নমতের সহাবস্থান নিশ্চিত হয়, রাজনৈতিক কর্মসূচিতে থাকে শিক্ষামূলক কার্যক্রম। যদি সেখানে শ্রেণি, ধর্ম ও লিঙ্গ পরিচয় নির্বিশেষে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত হয়। থাকে ভিন্নমতের প্রতি শ্রদ্ধা ও আস্থা, পারস্পরিক সহাবস্থানের চর্চা। যা আগের ছাত্র রাজনীতিতে থাকলেও বর্তমানে অনেকটাই অদৃশ্য।
এই অদৃশ্যমানতার পেছনে একটি প্রশ্নই যথেষ্ট, তা হলো- ক্যাম্পাসে অন্যান্য সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হলে যেখানে শিক্ষার্থীরা সৃজনশীল কাজে নিজেদের মনোসংযোগ তৈরি করতে পারে, কিংবা আত্মার সম্পর্ক তৈরি করতে পারে, সেখানে ছাত্র রাজনীতিতে যুক্ত হলে কেন কেউ কেউ কেবল ‘ক্ষমতা’র সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করে ফেলে? রাজনীতি কেন হয়ে ওঠে ক্যাম্পাসে ‘ক্ষমতার খেলা’?
ক্যাম্পাস নিয়ন্ত্রণ, ম্যানিপুলেশন ও ক্লায়েন্টালিজম নেটওয়ার্ক তৈরিই কেন ছাত্র রাজনীতির প্রধান বিষয় হয়ে ওঠে?
শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সময়ের কথা থেকে যেটা আমি খুব স্পষ্ট ধারণা পাই, সেগুলোকে তিন ভাগে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে:
প্রথমত, সাংস্কৃতিক ও অন্যান্য সংগঠন ছাত্র রাজনীতির সংগঠনগুলোর মতো কেন্দ্রীয় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নয়। অর্থাৎ কেন্দ্রীয় রাজনীতির লেজুড়বৃত্তি করায় যে দল ক্ষমতায় থাকে তখন ক্যাম্পাসে সেই দলের ছাত্র সংগঠন বেশ ‘ক্ষমতাবান’ হয়ে ওঠে।
ছাত্র রাজনীতি মানে নিজেদের কিছু স্বতন্ত্র রাজনৈতিক দায়িত্ব ও কর্তব্য নির্ধারণ করতে পারা এবং কর্তব্য পালনে দায়িত্বশীল আচরণ করা, সাধারণ ছাত্রদের অধিকার আদায়ের ব্যাপারে সরব ও সচেষ্ট থাকা, নিজ ক্যাম্পাসের উন্নয়নে কাজ করা, আবাসিক হলগুলোতে সাধারণ ছাত্রদের অধিকার নিশ্চিত করা, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে সচেতন থাকা ও মতামত প্রকাশ করা, বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি মুক্তচিন্তা চর্চার জন্য পরিবেশ তৈরি করা। এসব থেকে অনেকটাই ছিটকে পড়েছে বর্তমান সময়ের ছাত্র রাজনীতি।
দ্বিতীয়ত, ছাত্র রাজনীতি করার কারণে প্রশাসনের সঙ্গে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের যে ধরনের সম্পর্ক তৈরি হয়, এই সম্পর্কের ভিত্তিতে তারা কেউ কেউ নিজেকে অনেক বেশি ‘ক্ষমতাবান’ মনে করে। এই ভ্রান্ত ধারণাটি তাদের কাউকে কাউকে এক ধরনের বিভ্রান্ত করে দেয়।
তৃতীয়ত, এখন বেশিরভাগ আবাসিক হলে রাজনৈতিকভাবে সিট বরাদ্দ দেওয়া হয়, সেখানে বরাদ্দ তালিকায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা অনেকেই নিজেদের নাম খুঁজে পায় না, কারণ তারা ভর্তির পরপর রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে অংশ নেয়নি, গেস্টরুমের কোনও কার্যক্রমে অংশ নেয়নি, এমনকি বড় ভাইদের সঙ্গে ঠিকমতো যোগাযোগ রক্ষা করেনি। হলগুলো চালায় ছাত্রনেতারা, প্রশাসন নামেমাত্র সঙ্গে থাকে। যেহেতু ছাত্রনেতারা আবাসিক হলগুলোতে সিট বণ্টন এবং ছাত্রদের ইস্যুতে নিজেরাই নেতৃত্ব দিয়ে থাকে, ফলে তারা সিট বরাদ্দ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সাধারণ ছাত্রদের মাঝে এক ধরনের প্যাট্রন-ক্লায়েন্ট রিলেশনশিপ গড়ে তোলে। আর আমরা সবাই জানি, এই প্যাট্রন-ক্লায়েন্ট সম্পর্ক কীভাবে ক্লায়েন্টালিজমের নেটওয়ার্ক গড়ে তোলে এবং ক্লায়েন্টালিজম কী করে প্যাট্রনের নানা ধরনের কাজে অন্ধ সমর্থন দিয়ে থাকে।
এই ক্লায়েন্টালিজমের নেটওয়ার্কের একটা সুবিধা হলো, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করার অনেক বছর পরও একজন ছাত্রনেতা চাইলে হলে থাকতে পারে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক ঘটনা তা-ই জানান দেয়। ধর্ষক মোস্তাফিজ মীর মশাররফ হোসেন হলের সাবেক শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক। এই পরিচিতিই যথেষ্ট তাকে আড়াই বছর ধরে হলে থাকার সুযোগ-সুবিধা করে দেওয়ার জন্য। অথচ বর্তমান একজন শিক্ষার্থীর, যার এই সিটে থেকে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার কথা, অর্থাৎ লিগ্যালি এন্টাইটেলড, তাকে নিশ্চয়ই এই ‘ক্ষমতাবান’ নেতার জন্য গণরুমে কষ্ট করে থাকতে হচ্ছে!
তাহলে যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আমরা শ্রেণিকক্ষে ছাত্রদের ক্ষমতা-শোষণ- বঞ্চনার ইতিহাস ও রাজনীতি শেখাই, অন্তর্ভুক্তি-বর্জন (ইনক্লুশন-এক্সক্লুশন)-এর রাজনীতি পড়াই, সেখানে তারা তা পাঠ্যপুস্তকে পড়ছে, কিন্তু নিজেরাই বাস্তবে বঞ্চিত হচ্ছে। তার বরাদ্দকৃত সিটে সে থাকতে পারছে না, পারবে যদি সে রাজনৈতিক ক্লায়েন্টালিজমকে মেনে নেয়। কিন্তু কেন? তার এই বঞ্চনার দায় কে নেবে?
একজন শিক্ষার্থীর অধিকারবোধ খর্ব করে দেয় যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ইনফরমাল প্র্যাকটিস, সেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে বের হয়ে শিক্ষার্থীরা সাধারণের ‘অন্তর্ভুক্তির’ কথা ভাববে, সেই অনুযায়ী কাজ করবে, দুর্নীতি করবে না, ঘুষ খাবে না, অন্যকে বঞ্চিত করে নিজের প্রাপ্তি নিয়ে রাজনীতি করবে না, তা কী করে রাষ্ট্র আর এই সমাজ আশা করে?
বিষয়টি খুব সহজ করে যদি জানতে চাই যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের যে ধর্ষণের ঘটনাটি ঘটলো, তা কোনও সাধারণ শিক্ষার্থীর পক্ষে করা সম্ভব হবে? যেহেতু ধর্ষকদের কাছে ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের একটি বড় ধরনের পরিচয় দেওয়ার সাইনবোর্ড আছে, যা তাকে রক্ষা করবে বলে সে ধরে নেয়। এবং সহজেই এই সাইনবোর্ডটিকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের ‘ক্ষমতাবান’ ভাবতে থাকলো ধর্ষক ও তার সহযোগীরা, এবং ‘ক্ষমতা’র চূড়ান্ত প্রকাশ ঘটালো একজন নারীর ওপর পৈশাচিক নির্যাতনের মধ্য দিয়ে।
সরকারদলীয় ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকার অর্থ এই নয় যে একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে গুটিকয়েক শিক্ষার্থী ধরেই নেবে যে তাদের একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করার সুযোগ রয়েছে দলের নাম ভাঙ্গিয়ে। যে বিশ্ববিদ্যালয় সবার, এবং আগেই বলেছি, যে বিশ্ববিদ্যালয় জনমানুষের করের টাকায় চলে, সেখানে গুটিকয়েক ছাত্রনেতা এককভাবে নিজেদের সম্রাট ভেবে সাম্রাজ্য স্থাপন করা ও পরিচালনা করার যে রাজনৈতিক মনোভাব, তা থেকে তাদের বের হতে হবে। এ ব্যাপারে জিরো টলারেন্স না দেখানোর কোনও কারণ আমি দেখছি না, আর এটি কেন্দ্র থেকেই উচ্চারিত হতে হবে।
এবার আসি এই আলোচনায় যে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের এই ধরনের লাম্পট্য প্রকাশের পেছনে কেবলই কি ক্ষমতাসীন ছাত্র রাজনীতির যুক্ততা দায়ী, নাকি সঙ্গে সম্পর্কিত আছে সেসব বখে যাওয়া শিক্ষার্থীর বেড়ে ওঠার সামাজিক-পারিবারিক পরিবেশও?
সমাজ ও পরিবারে নারীদের সম্পর্কে শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও মমতা দেখে যে ছেলেটি বড় হয়, সে যত বড় রাজনৈতিক ক্ষমতার অংশ হোক না কেন, তার বা তাদের পক্ষে কি কোনও নারীকে ধর্ষণ করা সম্ভব?
যে পরিবার নারী-পুরুষের সমতা সম্পর্কের ধারণা দেয়নি, যে পরিবারে নারী হয়েছে সবসময় অবহেলিত, নিপীড়িত ও নির্যাতিত, যে পরিবারে বোনের চেয়ে ভাই হিসেবে সব কিছুতে পেয়েছে অগ্রাধিকার, সেই পরিবারে পুরুষ হিসেবে বেড়ে ওঠার প্রক্রিয়াতে বড় ধরনের ত্রুটি ছিল, আর সেসব ত্রুটিপূর্ণ শিক্ষা নারীকে একটি মাংসের পিণ্ড ছাড়া রক্তমাংসের মানুষ হিসেবে বিবেচনা করতে শেখাতে পারেনি। পারিবারিক শিক্ষার পাশাপাশি সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়, আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় নারীর প্রতি সহনশীল হওয়ার চর্চার অভাব, নৈতিক শিক্ষার অভাব, সব কিছুই এ ধরনের মনোভাবের জন্য দায়ী।
ভাবতে অবাক লাগে, এই শিক্ষার্থীরা ভর্তি পরীক্ষায় কয়েকশত প্রতিযোগীকে পেছনে ফেলে নানান গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করে, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত এমন একটি রাজনৈতিক দলের অঙ্গসংগঠন করে, পাশাপাশি বেঞ্চিতে নারী বন্ধুদের সঙ্গে গল্প করে, ক্লাস করে, আড্ডা দেয়- এত সব পরিচয়ের ভিড়ে নিজেদের এতটা নিচে কীভাবে নামাতে পারে?
সবচেয়ে বড় কথা, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পরিচয় নিয়ে নিজ ক্যাম্পাসেই ধর্ষণের মতো জঘন্যতম কাজ করার সাহস কীভাবে পায় এরা? তাহলে তাদের সঙ্গে যখন ওপরের এই পরিচয়গুলো থাকে না, ক্যাম্পাসের বাইরে থাকে, সমাজে মিলিয়ে যায় সাধারণে, তখন তারা আসলে কতটা জঘন্য, কতটা পৈশাচিক, কতটা ন্যক্কারজনক কাজে যুক্ত হতে পারে, ভাবতেই গা শিউরে উঠছে।
লেখক: শিক্ষক, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন