অপমানের বিষের পেয়ালা হাতে নীল হৃদয় মন্ডল, আপনি তো দেখছি গ্রাম বাংলার সক্রেটিস
14 April 2022, Thursday
এক. পোপকে লোকটি গুলি করে মারতে চেয়েছিল। গুলিবিদ্ধ পোপ মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে বেঁচে ফিরে ওই মানুষটির সাথে দেখা করার জন্য ছুটে গিয়েছিলেন। তার কুশল জানতে এবং তাকে সান্ত্বনা দিতে। জীবনের এমন স্তরে উত্তীর্ণ হতে এক জীবন পাড়ি দিতে হয়। দুই. গুলি খেয়ে মাটিতে পড়ে যাবার ঠিক আগের মুহূর্তে মহাত্মা গান্ধী বলে গিয়েছিলেন, তাঁর আঁততায়ীর গায়ে যেন কেউ হাত না তোলে। তিন. লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবালকে যে যুবকটি মাথায় আঘাত করে মারতে চেয়েছিল, জাফর ইকবাল সুস্থ হবার পর তার সাথে দেখা করতে ভোলেননি।
চার. নেলসন ম্যান্ডেলার যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছিল। তিনি যে জেলে ছিলেন সে কারাগার প্রধানের সাথে তাঁর রিলেশন কেমন হওয়া উচিত ছিল? একজন বেত হাতে ঘুরবে অন্য জনের চোখে মুখে থাকবে ঘৃণা। হয়েছিল তার উল্টো। দুজনের মধ্যে এমন বন্ধুত্ব হয়েছিল নেলসনের মুক্তিতে উল্লাস করতেও ভোলে নি কারাগার প্রধান। তাঁরা পরস্পরকে ক্ষমার চোখে দেখতেন।
পাঁচ. মহা মানবদের সকলেই অপমানিত হয়েছিলেন। তথাগত বুদ্ধ এসব অপমান গায়ে না মাখার জন্য ধ্যানে মগ্ন থাকতেন। প্রকৃতিই তাঁর অপমান ধুয়ে মুছে সাফ করে দিতো। ওহ হ্যাঁ বিষের পেয়ালা হাতে সক্রেটিসও ক্ষমা করার কথা বলতে ভুল করেননি। সাধারণত আমরা ক্ষমার গৌরব করি কিন্তু কাউকে তুচ্ছ কারণেও ক্ষমা করি না। ইতিহাস ও রাজনীতিতে ক্ষমা বিষয়টি থাকলে দেশের অনেক কৃতি মানুষ এখনো বেঁচে থাকতেন।
হৃদয় স্যারের সাজা হতে পারতো। শারীরিকভাবে নিগৃহীত হতে পারতেন। তাঁর মানহানিও কম কিছু হয়নি। এমনকি তাঁকে কদিন জেলের ভাতও খেতে হয়েছে। বিজ্ঞানের পক্ষে দাঁড়ানোর অপরাধে মানুষটি এরপরও বলছেন, ভুলে না গেলে, মাফ করতে না শিখলে কীসের শিক্ষক? অপমানের বিষের পেয়ালা হাতে নীল হৃদয় মন্ডল, আপনি তো দেখছি গ্রাম বাংলার সক্রেটিস। শেখার জন্য এখন কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় অকেজো যা আছে তা আপনার মতো মফস্বলের শিক্ষকদের ভেতরেই আছে। এ কারণেই জীবন এখনো সুন্দর।
লেখক : কলামিস্ট
উৎসঃ ব্রেকিং নিউজ
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন