একটি বাম বুর্জোয়া সংসদীয় দল হিসেবে সিপিএম তিন দশকের বেশি সময় পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় ছিল। কমিউনিস্ট নাম ধারণ করে থাকলেও ভারতের সাংবিধানিক আইন-কানুন মান্য করেই তাদের ক্ষমতায় থাকতে হয়েছিল। এ কারণে ক্ষমতায় গিয়ে বর্গাদারদের জন্য কিছু অধিকার নিশ্চিত করলেও এবং দখলের ভাগ বৃদ্ধি করলেও তার থেকে বেশি কিছু করা তাদের পক্ষে সম্ভব হয়নি। নীতিগতভাবে সিপিএম নেতৃত্ব ভূমি সংস্কার আরও এগিয়ে নিতে নিজেরা কতখানি অঙ্গীকারবদ্ধ ছিল এ প্রশ্ন বাদ দিয়েও বলা চলে যে, ভারতীয় সংবিধানে ব্যক্তিগত সম্পত্তির অধিকার যেভাবে রক্ষিত আছে তাকে খর্ব বা ক্ষুণ্ণ করে কোনো প্রকৃত ভূমি সংস্কার তারা করতে পারেনি। শ্রমিকদের জন্যও তারা প্রকৃতপক্ষে কিছু করেনি। পুঁজি ও শ্রমের সম্পর্ক ভারতের অন্য রাজ্যগুলোতে যেভাবে ছিল এবং এখনও আছে, সিপিএমের আমলেও সে রকমই ছিল। কাজেই এদিক দিয়ে বোঝার উপায় ছিল না যে, পশ্চিমবঙ্গে কোনো কমিউনিস্ট পার্টির শাসন আছে। উপরন্তু সরকারি ক্ষমতায় সিপিএম বহু ক্ষেত্রেই শ্রমিকের পরিবর্তে মালিকের পক্ষে অবস্থান নেয়ায় শোষণের মাত্রা কমেনি। তাছাড়া বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার জন্য অনেক কলকারখানা পশ্চিমবঙ্গে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
ক্ষমতায় থাকার সময় সিপিএম ক্রমেই শাসকশ্রেণীর স্বার্থের দিকেই বেশি করে ঝুঁকছিল। এমনভাবে ঝুঁকছিল যে, সিপিএমকে ভয় করার কোনো কারণ তাদের ছিল না। সিপিএম আসলে নিজেই নিজের কারাগারে বন্দি হয়েছিল। যদি কোনো রাজনৈতিক দল দৃঢ়ভাবে স্থির করে যে, ক্ষমতায় যেভাবে হোক তাকে থাকতেই হবে, তাহলে তাকে অনেক রকম কাজ করতে হয়। প্রথমত, তাকে কাজ করতে হয় বিশ্বস্ততার সঙ্গে দেশের সংবিধান মান্য করে। সিপিএম সেই সিদ্ধান্তই নিয়েছিল। দ্বিতীয়ত, তাকে কাজ করতে হবে কোনো বিপ্লবী শক্তির বিকাশ ঘটানোর জন্য নয়, উপরন্তু বিপ্লবী শক্তির বিকাশের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক হয়ে শাসকশ্রেণীর স্বার্থ রক্ষার জন্য। সিপিএম তা-ই করেছিল। এর জন্য দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পুঁজির খেদমতে তাদের থাকতে হয়েছিল। এ অবস্থায় একদিকে কৃষকদের স্বার্থরক্ষা এবং তাদের আরও নতুন অধিকার দেয়ার উদ্দেশ্যে ভূমি সংস্কার এগিয়ে নেয়া, কৃষি সমবায় গঠন করা ইত্যাদির ধারেকাছে তারা যায়নি। ভূমি সংস্কার এমন জিনিস যা শুরু করে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকা যায় না। তাকে ক্রমেই ঠেলে এগিয়ে নিতে হয়। এ কাজ করার ক্ষমতা সিপিএমের ছিল না। কারণ তারা স্থির করেছিল, যেমন করেই হোক, তাদের ক্ষমতায় থাকতে হবে এবং তার জন্য ভারতের সংবিধানের কাঠামোর মধ্যে থেকে শুধু শাসকশ্রেণীর স্বার্থ সংরক্ষণই নয়, নিজেও পুরোপুরি শাসকশ্রেণীর অংশে পরিণত হতে হবে। ১৯৭৭ সালে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে সিপিএম এই পথ ধরেই সিঙ্গুর ও নন্দীগ্রামে পৌঁছেছিল। পশ্চিমবঙ্গে সিপিএম নির্বাচনের পর নির্বাচন জিতে তিন দশকের বেশি ক্ষমতায় থাকলেও শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের মাধ্যমেই তাদের সরকার তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়েছিল।
কমিউনিস্ট পার্টি নাম ধারণ করে নির্বাচনের মাধ্যমে সিপিএম যত দীর্ঘদিন ক্ষমতায় ছিল তার মতো রেকর্ড আর কোনো দেশে কোথাও আজ পর্যন্ত দেখা যায়নি। এদিক দিয়ে তাদের কৃতিত্ব আছে। কিন্তু তাহলেও এই দীর্ঘ শাসনকালে জনগণকে এমন উল্লেখযোগ্য কিছু তারা দিতে পারেনি, যা নিয়ে কোনো কমিউনিস্ট গর্ব করতে পারে। কল্যাণ রাষ্ট্র নামে পরিচিত অনেক বুর্জোয়া রাষ্ট্রে সরাসরি মানুষ স্বাস্থ্য, শিক্ষা, জীবন-জীবিকা ইত্যাদি ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গের থেকে অনেক বেশি পেয়েছে। অন্যদিকে সিপিএম সিঙ্গুর ও নন্দীগ্রামে কৃষক এলাকায় শিল্পোন্নয়নের নামে দেশি-বিদেশি পুঁজির খেদমত করতে গিয়ে জনগণের প্রতি যে নিষ্ঠুরতার নিদর্শন রেখেছিল, তার প্রতিশোধই জনগণ নিয়েছিলেন ২০১১ সালের রাজ্য নির্বাচনে। ১৯৭৭ সালের পর বড় আকারে পরাজিত হয়ে তারা ক্ষমতা হারিয়েছিল। কিন্তু বিস্ময়ের ব্যাপার হল, তাদের এই পরাজয়ের সম্ভাবনার বিষয়ে তাদের কোনো ধারণা ছিল না! এ কারণে নির্বাচনের পর ফলাফল গুনতি করার সময়েও তাদের পরিপূর্ণ আস্থার সঙ্গে বলতে শোনা গিয়েছিল যে, তারাই জয়লাভ করে আবার ক্ষমতাসীন হবে!
দীর্ঘদিন শাসন করার পর ক্ষমতা হারিয়ে আবার উঠে দাঁড়ানো কারও পক্ষে সহজ নয়। ১৯৭৭ সালে ইন্দিরা গান্ধীর নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস সরকার পরাজিত হওয়ার পর বুর্জোয়া শাসকশ্রেণীর অভ্যন্তরীণ দুর্বলতার কারণে ইন্দিরা গান্ধী আবার ক্ষমতায় গিয়েছিলেন এবং তার মৃত্যুর পর কংগ্রেস আরও কয়েক বছর ক্ষমতায় ছিল। কিন্তু যে অবক্ষয়ের কারণে কংগ্রেস ১৯৭৭ সালে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছিল সেই সাংগঠনিক অবক্ষয়ের কারণে এবং ভারতে বুর্জোয়া শ্রেণী আরও বেশি করে দক্ষিণে মোড় নেয়ার পরিণতিতে কংগ্রেসের পরিবর্তে এখন ভারতে আরএসএসের মতো হিন্দুত্ববাদী চরম প্রতিক্রিয়াশীলরা বিজেপি গঠন করে ক্ষমতাসীন হয়েছে। শুধু ক্ষমতাসীন হয়েছে তাই নয়, তারা ভারতের রাজনীতিতে ধর্মবিযুক্ততার (Secularism) বিনাশ সাধন এমনভাবে করেছে যা আগে কোনোদিন দেখা যায়নি, যদিও কংগ্রেস শাসন বাহ্যত ধর্মবিযুক্ততার কথা বললেও তারাও প্রকৃতপক্ষে একটি সাম্প্রদায়িক দল হিসেবেই মুসলমান সংখ্যালঘুদের জন্য কিছুই করেনি, উপরন্তু অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে তাদের প্রান্তিকীকরণ ঘটিয়েছিল। ব্রিটিশ আমলে সংখ্যালঘু মুসলমানদের যে অবস্থা ছিল তার তুলনায় মুসলমানদের অবস্থার অবিশ্বাস্য অবনতি ঘটেছিল। কংগ্রেস সরকারের দ্বারা গঠিত সাচার কমিটির রিপোর্টে বলা হয়েছিল, মুসলমানদের অবস্থা ভারতে দলিতদের থেকেও খারাপ! কাজেই এটা ঠিক নয় যে, কংগ্রেস একটি অসাম্প্রদায়িক ও ধর্মবিযুক্ত দল ছিল এবং হঠাৎ করে ভারতে বিজেপি আকাশ থেকে নেমে এসে ক্ষমতা দখল করেছে। কংগ্রেস যে সাম্প্রদায়িক নীতি ১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৯০ পর্যন্ত অনুসরণ ও কার্যকর করে এসেছে, বিজেপির হিন্দুত্ববাদী শাসন তারই অপরিহার্য পরিণতি।
পশ্চিমবঙ্গে সিপিএম তিন দশকের বেশি শাসনক্ষমতায় থেকে মুসলমানদের জন্য কিছুই করেনি। এমনকি সাচার কমিটির রিপোর্টও তারা বিবেচনা ও গ্রহণ করেনি। যেমন তারা বিবেচনা ও গ্রহণ করেনি দলিতদের অবস্থার বিষয়ে গঠিত মণ্ডল কমিশনের বিখ্যাত রিপোর্ট। অন্য কথা বাদ দিয়েও দেখা যায় যে, পশ্চিমবঙ্গে মুসলমানদের চাকরির অবস্থা কংগ্রেসের সময় যা ছিল, সিপিএমের সময়েও তাই-ই ছিল। মুসলমানদের সংখ্যা ৩৫ শতাংশ হলেও চাকরি ছিল ২ শতাংশেরও কম। তবে একেবারে শেষের দিকে এসে তারা মুসলমানদের জন্য ১০ শতাংশ চাকরি সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেছিল। সেই অনুযায়ী তৃণমূল কংগ্রেস আমলে মুসলমানদের চাকরির অবস্থার কিছু উন্নতি হয়েছে, যদিও জনসংখ্যার তুলনায় তা সামান্যই।
কংগ্রেস এবং সিপিএমের সুদীর্ঘ শাসন আমলে পশ্চিমবঙ্গে অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে মুসলমানরা স্বাধীন ভারতে অগ্রসর হওয়ার পরিবর্তে যথেষ্ট পিছিয়ে গেছেন। চাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্য ইত্যাদি ক্ষেত্রে তো বটেই, এমনকি শিক্ষা-সংস্কৃতি ক্ষেত্রেও মুসলমানদের কোনো উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি কোথাও নেই। রেডিও, টেলিভিশন, সংবাদপত্র, সঙ্গীত, নাটক, সাহিত্য- সব ক্ষেত্রেই প্রায় একই অবস্থা। এসব দেখে মনে হয় না যে, পশ্চিমবঙ্গে জনসংখ্যার ৩৫ শতাংশ মুসলমান। খুব সুপরিকল্পিত সাম্প্রদায়িক নীতি ছাড়া এটা কিছুতেই সম্ভব হতো না। এক্ষেত্রে মনে রাখা দরকার, সাম্প্রদায়িকতার অর্থ শুধু দাঙ্গা-হাঙ্গামা বাধানো নয়। অর্থনীতি, শিক্ষা, সংস্কৃতি ইত্যাদি ক্ষেত্রে সাম্প্রদায়িক বৈষম্য সৃষ্টি করা এবং তা কমিয়ে না এনে রক্ষা করা বা বাড়িয়ে তোলা হল সাম্প্রদায়িকতার সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ দিক। কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিএমের শাসনের সঙ্গে এদিক দিয়ে কংগ্রেস শাসনের কোনো উল্লেখযোগ্য পার্থক্যই নির্দেশ করা যাবে না। কমিউনিস্ট পার্টি সাম্প্রদায়িক এ কথা বললে বা শুনলে সাধারণভাবে মানুষের আঁতকে ওঠার কথা। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে সংখ্যালঘু মুসলমানদের প্রতি সিপিএম সরকার যে আচরণ করেছে তাকে সাম্প্রদায়িক আখ্যা দিলে সত্যের কোনো অপলাপ হয় না। তবে এ প্রসঙ্গে এটা অবশ্যই জোরের সঙ্গে বলা দরকার যে, সিপিআই বা সিপিএম কোনো সময়ে তাদের কথাবার্তা বা প্রচার-প্রচারণায় সাম্প্রদায়িকতার ব্যবহার করেনি। তারা অসাম্প্রদায়িকতাই প্রচার করেছে এবং পশ্চিমবঙ্গে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা পরিস্থিতি তারা সৃষ্টি হতে দেয়নি এবং কোনো জায়গায় সে পরিস্থিতির সম্ভাবনা দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে তার মোকাবেলা করেছে। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে ধর্মবিযুক্ত নীতি গ্রহণ না করে তার বিপরীত পথ ধরে অগ্রসর হলে যা হয় তাই হয়েছে। সিপিএমের দীর্ঘ শাসন পশ্চিমবঙ্গে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে এমন কোনো প্রতিরোধ শক্তির জন্মদান করতে পারেনি যাতে সাম্প্রদায়িতার প্রকাশ্য প্রচার ও তার পরিণতিতে হিন্দুত্ববাদী দাঙ্গা-হাঙ্গামা ঠেকিয়ে রাখা যায়। এ কারণে পশ্চিমবঙ্গে এখন সাম্প্রদায়িকতার অনুপ্রবেশ বিজেপির হাত ধরে ঘটে চলেছে। যেভাবে আরএসএস মার্কা হিন্দুত্ববাদী প্রচার পশ্চিমবঙ্গে চলছে, তাতে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার শর্ত সেখানে বেশ ভালোভাবে ও দ্রুতই তৈরি হচ্ছে, যা মোকাবেলা করার ক্ষমতা সিপিএমের নেই।
পশ্চিমবঙ্গে এখন রাজনৈতিক ও সাংগঠনিকভাবে মমতা ব্যানার্জির নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কংগ্রেসের অবস্থা অন্যদের তুলনায় ভালো। আগে যে মুসলমানরা কংগ্রেস ও সিপিএমকে ভোট দিত, তারা বিগত দুই নির্বাচনে তৃণমূলকে ভোট দিয়েছে। বিপদের মুখে পড়ে খড়কুটো ধরার মতো অবস্থাতেই তারা এটা করেছে। কিন্তু মমতা ব্যানার্জি এখন পশ্চিমবঙ্গে যেভাবে পুলিশ ও তাদের ঠেঙ্গাড়ে বাহিনী দিয়ে এক ফ্যাসিস্ট সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে তাতে তাদের জনপ্রিয়তা আর আগের মতো নেই। কিন্তু লক্ষ করার বিষয়, তাদের জনপ্রিয়তা কমতে থাকার মুখে সিপিএম বা বামফ্রন্টের জনপ্রিয়তা বাড়ছে না। সেটা বিপজ্জনকভাবে ঘটছে বিজেপির ক্ষেত্রে। সাংগঠনিকভাবে তারা এখনও পশ্চিমবঙ্গে খুব দুর্বল, কিন্তু হিন্দুত্ববাদের প্রচার সেখানে জোরকদমে চলছে। হিন্দুত্ববাদের জনপ্রিয়তা অর্থাৎ চরম সাম্প্রদায়িকতা মাথাচাড়া দেয়ার মতো শর্ত পশ্চিমবঙ্গে তৈরি হচ্ছে। আগামী নির্বাচনে একদিকে যেমন সিপিএম ও বামফ্রন্টের জয়ের কোনো সম্ভাবনা নেই, তেমনি জয়ের সম্ভাবনা নেই বিজেপিরও। তবে তাদের ভোট যে বৃদ্ধি পাবে এতে সন্দেহ নেই। কিন্তু এর পরিণতিতে তারও পরবর্তী নির্বাচনে কোনোরকমে কাজ চলার মতো সংগঠন দাঁড় করিয়ে এবং কেন্দ্রীয় সরকারের সহযোগিতায় যদি বিজেপি সরকার গঠন করে তাতে বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই। বিশেষত এ কারণেও এটা ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে যে, ভারতে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকারকে নির্বাচনের মাধ্যমে হঠিয়ে দেয়ার ক্ষমতা যে কংগ্রেসসহ কোনো সর্বভারতীয় রাজনৈতিক দল বা তাদের জোটের আছে, এমন কোনো লক্ষণও ভারতের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে নেই।
বদরুদ্দীন উমর : সভাপতি, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল
উৎসঃ যুগান্তর
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন