মানুষের জীবন ধারণের জন্য খাদ্য অপরিহার্য; তবে সে খাদ্য হওয়া চাই নিরাপদ ও বিশুদ্ধ। মানুষের জীবন ধারণের পাঁচটি মৌলিক উপকরণের অন্যতম হলো খাদ্য। এ পৃথিবীতে যে সব রাষ্ট্র উন্নত ও কল্যাণমূলক হিসেবে খ্যাত সে সব রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে দেশের প্রতিটি নাগরিকের জন্য নিরাপদ খাদ্যের নিশ্চয়তা দেয়া হয়। উন্নত ও কল্যাণমূলক রাষ্ট্রে নিরাপদ খাদ্যের নিরাপত্তা একটি মৌলিক অধিকার। রাষ্ট্রের যেকোনো নাগরিকের ক্ষেত্রে এ অধিকারটি ক্ষু্ণ্ন হলে তা বলবতের জন্য এসব রাষ্ট্রে সংক্ষুব্ধ নাগরিককে আইনের আশ্রয় লাভের অধিকার দেয়া হয়েছে।
আমাদের বাংলাদেশে খাদ্যের নিরাপত্তা বা নিরাপদ খাদ্যের নিরাপত্তা মৌলিক অধিকার না হলেও রাষ্ট্র পরিচালনার একটি মূলনীতি হিসেবে স্বীকৃত। আর এ কারণে আমাদের দেশে যেকোনো নাগরিকের ক্ষেত্রে এ অধিকারটি ক্ষুণ্ন হলে তার পক্ষে তা বলবৎ করার জন্য আদালতের আশ্রয় গ্রহণের সুযোগ নেই।
আমাদের নীতিনির্ধারক ও আইনপ্রণেতারা জনস্বাস্থ্য ও জনসাধারণের নিরাপদ খাদ্যের নিশ্চয়তা বিষয়ে সচেষ্ট। এ দায়িত্ববোধ থেকেই মানুষের জীবন ও স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য নিরাপদ খাদ্য প্রাপ্তির অধিকার নিশ্চিতকরণে ২০১৩ সালে নিরাপদ খাদ্য আইন প্রণীত হয়। এ আইনটি ১৯৫৯ সালে প্রণীত বিশুদ্ধ খাদ্য অধ্যাদেশ (ঞযব চঁৎব ঋড়ড়ফ ঙৎফরহধহপব, ১৯৫৯)-এর উত্তরসূরি। এ আইনটি প্রণয়নের সাথে সাথে আগেকার আইনটি বাতিল হওয়ার কারণে এটি ওই আইনের স্থলাভিষিক্ত হয়।
নিরাপদ খাদ্য আইনে খাদ্যের যে সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে তাতে উল্লেখ রয়েছে- ‘খাদ্য’ অর্থ চর্ব্য, চূষ্য, লেহ্য (যেমন- খাদ্যশস্য, ডাল, মৎস্য, গোশত, দুগ্ধ, ডিম, ভোজ্যতেল, ফলমূল, শাকসবজি, ইত্যাদি) বা পেয় (যেমন- সাধারণ পানি, বায়ুবায়িত পানি, অঙ্গারায়িত পানি, এ্যানার্জি-ড্রিংক, ইত্যাদি) সহ সব প্রকার প্রক্রিয়াজাত, আংশিক প্রক্রিয়াজাত বা অপ্রক্রিয়াজাত আহার্য উৎপাদন ও খাদ্য, প্রক্রিয়াকরণ বা প্রস্তুতকরণে ব্যবহৃত উপকরণ বা কাঁচামালও, যা মানবদেহের জন্য উপকারী আহার্য্য হিসেবে জীবন ধারণ, পুষ্টিসাধন ও স্বাস্থ্যরক্ষায় ব্যবহৃত হয় তাও খাদ্যের অন্তর্ভুক্ত হবে। তা ছাড়া আহার্য প্রস্তুতকরণে ব্যবহৃত রঞ্জক, সুগন্ধী, মসলা, সংযোজন দ্রব্য, সংরক্ষণ দ্রব্য, এন্টিঅক্সিডেন্ট, যা মূল আহার্য নয় কিন্তু খাদ্য উৎপাদন, সংরক্ষণ বা প্রস্তুতকরণে ব্যবহৃত হয় তাও খাদ্যের অন্তর্ভুক্ত হবে। এর অতিরিক্ত সরকার কর্তৃক, সময় সময়, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা খাদ্য বলে ঘোষিত দ্রব্যাদি, এ আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে খাদ্যের অন্তর্ভুক্ত হবে; তবে ওষুধ, ভেষজ, মাদক ও সৌন্দর্যসামগ্রী, ইত্যাদি খাদ্যের অন্তর্ভুক্ত হবে না।
আইনটিতে ‘নিরাপদ খাদ্য বলতে প্রত্যাশিত ব্যবহার ও উপযোগিতা অনুযায়ী মানুষের জন্য বিশুদ্ধ ও স্বাস্থ্যসম্মত আহার্য বোঝানো হয়েছে, অপরদিকে ‘নকল খাদ্য’ বলতে যা বোঝানো হয়েছে তা হলো- বিক্রির জন্য অনুমোদিত কোনো খাদ্যদ্রব্য বা খাদ্যোপকরণে অননুমোদিতভাবে অনুরূপ খাদ্য উৎপাদন, আমদানি, প্রস্তুত বা লেবেলিং করা, যার মধ্যে অননুমোদিত খাদ্যের উপাদান, উপকরণ, বিশুদ্ধতা ও গুণগত মানের উপস্থিতি বা অনুপস্থিতি বিদ্যমান।
আইনটিতে নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থা সম্পর্কিত যে সব বিধিনিষেধের উল্লেখ রয়েছে তা হলো- ১. বিষাক্ত দ্রব্যের ব্যবহার পরিহার; ২. তেজস্ক্রিয়, ভারী-ধাতু, ইত্যাদির মাত্রাতারিক্ত ব্যবহার রোধ; ৩. ভেজাল খাদ্য বা খাদ্যোপকরণ উৎপাদন, আমদানি, বিপণন, ইত্যাদি পরিহার; ৪. নিম্নমানের খাদ্য উৎপাদন, ইত্যাদি না করা; ৫. খাদ্য সংযোজন দ্রব্য বা প্রক্রিয়াকরণ সহায়ক দ্রব্যের ব্যবহার না করা; ৬. শিল্প-কারখানায় ব্যবহৃত তেল, বর্জ্য, ভেজাল বা দূষণকারী দ্রব্য, ইত্যাদি খাদ্য স্থাপনায় না রাখা; ৭. মেয়াদোত্তীর্ণ খাদ্যদ্রব্য বা খাদ্যোপকরণ না রাখা; ৮. বৃদ্ধি প্রবর্ধক, কীটনাশক, বালাইনাশক বা ওষুধের অবশিষ্টাংশ, অণুজীব, ইত্যাদির ব্যবহার পরিহার; ৯. বংশগত বৈশিষ্ট্য পরিবর্তনকৃত খাদ্য, জৈবখাদ্য, ব্যবহারিক খাদ্য, স্বত্বাধিকারী খাদ্য, ইত্যাদি সরবরাহ বা বিক্রয় না করা; ১০. খাদ্য মোড়কীকরণ ও লেবেলিং পরিবর্তন না করা; ১১. মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর বিবেচিত প্রক্রিয়ায় খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন, বিক্রয়, ইত্যাদি পরিহার; ১২. রোগাক্রান্ত বা পচা মৎস্য, গোশত, দুগ্ধ বিক্রয়, ইত্যাদি না করা; ১৩. হোটেল রেস্তোরাঁ বা ভোজনস্থলের পরিবেশন-সেবা দ্বারা ভোক্তার স্বাস্থ্যহানি না ঘটানো; ১৪. ছোঁয়াচে ব্যাধিতে আক্রান্ত ব্যক্তির দ্বারা খাদ্যদ্রব্য প্রস্তুত, ইত্যাদি না করা; ১৫. নকল খাদ্য উৎপাদন, বিক্রয়, ইত্যাদি পরিহার; ১৬. সংশ্লিষ্ট পক্ষগণের নাম, ঠিকানা ও রশিদ বা চালান সংরক্ষণ ও প্রদর্শন করা; ১৭. অনিবন্ধিত অবস্থায় খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন, বিক্রয়, ইত্যাদি না করা; ১৮. কর্তৃপক্ষ বা তৎকর্র্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে সহযোগিতা করা; ১৯. বিজ্ঞাপনে অসত্য বা বিভ্রান্তিকর তথ্য না দেয়া এবং ২০. মিথ্যা বিজ্ঞাপন প্রস্তুত, মুদ্রণ, বা প্রচার না করা।
উপরোক্ত যেকোনো কাজের স্খলন আইনটিতে অপরাধ হিসেবে গণ্য করে বলা হয়েছে- ধারা নম্বর ২৩-৩১, ৩৩-৩৫ ও ৩৭-এ বর্ণিত অপরাধ আমলযোগ্য ও অজামিনযোগ্য পক্ষান্তরে ওই অপরাধ ব্যতীত অপরাপর অপরাধসমূহ অআমলযোগ্য ও জামিনযোগ্য।
অপরাধের বিচার বিষয়ে আইনটিতে স্ববিরোধিতা রয়েছে। আইনটির ধারা নম্বর ৬৪-তে বলা হয়েছে- এ আইনের অধীন অপরাধ বিচারের জন্য প্রয়োজনীয়সংখ্যক আদালত থাকবে যা বিশুদ্ধ খাদ্য আদালত নামে অভিহিত হবে এবং ফৌজদারি কার্যবিধিতে যা কিছুই থাকুক না কেন এ আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, সরকার সুপ্রিম কোর্টের সাথে পরামর্শক্রমে, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেট আদালত বা ক্ষেত্রমতো, মেট্রোপলিটন এলাকার জন্য মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতকে বিশুদ্ধ খাদ্য আদালত হিসেবে নির্ধারণ করবে এবং একাধিক আদালত নির্ধারণ করা হলে এর প্রত্যেকটির জন্য এলাকা নির্ধারণ করে দেবে।
অর্থদণ্ড আরোপ বিষয়ে আইনটিতে বলা হয়েছে- ফৌজদারি কার্যবিধিতে যা কিছুই থাকুক না কেন এ আইনের অধীন কোনো ব্যক্তির ওপর অর্থদণ্ড আরোপের ক্ষেত্রে আদালত আইনে উল্লিখিত যেকোনো পরিমাণ অর্থদণ্ড আরোপ করতে পারবে। উল্লেখ্য ফৌজদারি কার্যবিধিতে বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটদের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড প্রদানের ক্ষমতা শ্রেণিভেদে নির্ধারণ করে দেয়া আছে কিন্তু এ আইনটিতে কারাদণ্ডের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে- অনধিক পাঁচ বছর ও অন্যূন ছয় মাস বা অর্থদণ্ডের ক্ষেত্রে অনধিক ১০ লাখ এবং অন্যূন এক লাখ বা উভয় দণ্ড; তবে একই অপরাধ পুনরাবৃত্তির ক্ষেত্রে অনধিক পাঁচ বছর বা অন্যূন এক বছর কারাদণ্ড বা অনধিক ২০ লাখ এবং অন্যূন চার লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড। ফৌজদারি কার্যবিধিতে বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটদের কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড করার যে ক্ষমতা দেয়া আছে তা হলো- প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষেত্রে অনধিক পাঁচ বছর কারাদণ্ড অথবা ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ড। দ্বিতীয় শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষেত্রে অনধিক তিন বছরের কারাদণ্ড অথবা তিন হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ড। তৃতীয় শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষেত্রে অনধিক দু’বছরের কারাদণ্ড অথবা দুই হাজার টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ড।
আইনটির ধারা ৭৫-এ বলা হয়েছে- এ আইনে ভিন্নরূপ যা কিছুই থাকুক না কেন, এ আইনের অধীন অপরাধসমূহ, যে ক্ষেত্রে যতটুকু প্রযোজ্য, মোবাইল কোর্ট আইন-২০০৯ অনুসারে বিচার্য্য হবে। এ আইনটি ২০১৩ সালের ১০ অক্টোবর গেজেট বিজ্ঞপ্তি আকারে প্রকাশিত হলেও এটি কার্যকর হয় ১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সালে। কার্যকর পরবর্তী সরকার কর্তৃক অদ্যাবধি সুপ্রিম কোর্টের সাথে পরামর্শক্রমে প্রথম শ্রেণীর বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট সমন্বয়ে বিশুদ্ধ খাদ্য আদালত গঠন করা না হলেও আইনটি মোবাইল কোর্ট আইন-২০০৯-এর তফসিলভুক্তকরতঃ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের এ আইনের অধীন কৃত যেকোনো অপরাধ মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে বিচারের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা মোবাইল কোর্টের আওতায় এ আইনের অধীন অপরাধসমূহের সংক্ষিপ্ত ও তাৎক্ষণিক বিচারে কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড প্রদানের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ও অন্যূন যে ক্ষমতা প্রয়োগ করেন তা অর্থদণ্ডের ক্ষেত্রে স্পষ্টতঃ বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটদের এখতিয়ারবহির্ভূত।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক যেকোনো ধরনের কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড প্রদান বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও স্বাতন্ত্র্যবিরোধী। সুতরাং একজন বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেটের শ্রেণিভেদে কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড দেয়ার ক্ষেত্রে যে ক্ষমতা নেই একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে তার চেয়েও অধিক ক্ষমতা প্রদান আইন ও ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থাপনার চিন্তা-চেতনার সাথে সাংঘর্ষিক।
আইনটিতে ফৌজদারি প্রতিকারের পাশাপাশি দেওয়ানি প্রতিকারের কথা বলা হয়েছে এবং এরূপ ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির ক্ষতির পরিমাণ আর্থিক মূল্যে নিরূপণযোগ্য হলে তিনি ওই নিরোপিত অর্থের অনূর্ধ্ব পাঁচগুণ আর্থিক ক্ষতিপূরণ দাবি করে এখতিয়ারাধীন দেওয়ানি আদালতে ক্ষতিপূরণের মামলা দায়ের করতে পারেন। আইনটি অবলোকনে প্রতীয়মান হয়, খাদ্য আদালত কর্তৃক কোনো অভিয্ক্তু ব্যক্তিকে দোষী সাব্যস্ত করে কোনো অর্থদণ্ড আরোপ করা হলে ওই অর্থের ২৫ শতাংশ প্রণোদনা হিসেবে সংশ্লিষ্ট অভিযোগকারীকে দেয়ার বিধান রয়েছে; তবে অভিযোগকারী কর্তৃপক্ষের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি হলে তার ক্ষেত্রে প্রণোদনা প্রযোজ্য হবে না। বিশুদ্ধ খাদ্য আদালত প্রতিষ্ঠা-পরবর্তী উপরোক্ত প্রণোদনাসংক্রান্ত বিধানটি অক্ষুণ্ন থাকলে এর সমূহ অপপ্রয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে। আর এ সম্ভাবনার দিকটিকে বিবেচনায় নিয়ে বিশুদ্ধ খাদ্য আদালত কার্যকর পরবর্তী এ বিধানটির প্রয়োগ আদৌ সমীচীন কি না সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ জরুরি।
আইনটিতে একজন চেয়ারম্যান ও চারজন সদস্য সমন্বয়ে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ গঠনের কথা বলা হলেও এরূপ কর্তৃপক্ষ তখনই কার্যক্ষম যখন বিশুদ্ধ খাদ্য আদালত যথারীতি কার্যকর। আইনটিতে কর্তৃপক্ষকে প্রশাসনিক তদন্ত ও ক্ষেত্রবিশেষে অনধিক তিন লাখ টাকা পর্যন্ত প্রশাসনিক জরিমানা আরোপের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। কর্তৃপক্ষ স্বাধীন ও নিরপেক্ষ আদালত নয় বিধায় জরিমানা আরোপের এরূপ ক্ষমতা প্রদান সংবিধানের অনুচ্ছেদ নং ৩৫(৩)-এর পরিপন্থী। প্রশাসনিক জরিমানা দ্বারা সংক্ষুব্ধ ব্যক্তিকে সরকারের কাছে আপিল করার ক্ষমতা দেয়া হলেও এখানে সরকার বলতে কাকে বোঝানো হয়েছে তা অস্পষ্ট। তা ছাড়া সরকার আদালত নয় বিধায় সরকারের পক্ষে এরূপ আপিলের নিষ্পত্তি সংবিধান কর্তৃক স্বীকৃত স্বাধীন ও নিরপেক্ষ বিচার এবং আদালত ব্যবস্থাপনার সাথে সামঞ্জস্যহীন।
প্রতিটি আইন প্রণয়নের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য থাকে। নিরাপদ খাদ্য বিষয়ে ইতঃপূর্বে আমাদের দেশে আইন থাকলেও আলোচ্য আইনটি কার্যকরকালীন আগেকার আইনটি বাতিল করা হয়েছে। আগেকার আইনে প্রথম শ্রেণীর ম্যাজিস্ট্রেটকে আইনের অধীন অপরাধ বিচারের ক্ষমতা দেয়া হয়েছিল। সে আইনটি কার্যকর থাকাকালীন ১ নভেম্বর ২০০৭ অবধি প্রশাসন ক্যাডারের অন্তর্ভুক্ত সহকারী কমিশনাররা বিচারিক ও নির্বাহী উভয় ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব পালন করতেন। কিন্তু বর্তমানে বিচারিক ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পৃথক স্বত্বাধিকারী হওয়ায় আলোচ্য আইনটি কার্যকর পরবর্তী বিচারের বিধানের ভিন্নতা দ্ব্যর্থকতার জন্ম দেয়। যেকোনো আইনের ক্ষেত্রে এরূপ দ্ব্যর্থকতা আইনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে ব্যাহত করে। সে নিরিখে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতকরণে এ আইনটির কার্যক্ষমতা নানাবিধ প্রশ্নের উদয় ঘটাচ্ছে।
লেখক : সাবেক জজ, সংবিধান, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষক
উৎসঃ নয়াদিগন্ত
পাঠক মন্তব্য
সকল মন্তব্য দেখার জন্য ক্লিক করুন